পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সৌন্দর্য ও সাহিত্য

‘সৌন্দর্যবোধ’ ও ‘বিশ্বসাহিত্য’ প্রবন্ধে আমার বক্তব্য বিষয়টি স্পষ্ট হয় নাই, এমন অপবাদ প্রচার হওয়াতে যথাসাধ্য পুনরুক্তি বাঁচাইয়া মূলকথাটা পরিষ্কার করিয়া লইবার চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইলাম।

 যেমন জগতে যে ঘটনাটিকে কেবল এইমাত্র জানি যে তাহা ঘটিতেছে, কিন্তু কেন ঘটিতেছে, তাহার পূর্বাপর কী, জগতের অন্যান্য ঘটনার সঙ্গে তাহার সম্বন্ধ কোথায়, তাহা না জানিলে তাহাকে পুরাপুরি আমাদের জ্ঞানে জানা হয় না—তেমনি জগতে যে সত্য কেবল আছে মাত্র বলিয়াই জানি, কিন্তু তাহাতে আমার কোনো আনন্দই নাই, তাহা আমার হৃদয়ের পক্ষে একেবারে নাই বলিলেই হয়। এই-যে এতবড়ো জগতে আমরা রহিয়াছি ইহার অনেকটাকেই আমাদের জানা-জগতের সম্পূর্ণ সামিল করিয়া আনিতে পারি নাই এবং ইহার অধিকাংশই আমাদের মনোহর জগতের মধ্যে ভুক্ত হইয়া আমাদের আপন হইয়া উঠে নাই।

 অথচ, জগতের যতটা জ্ঞানের দ্বারা আমি জানিব ও হৃদয়ের দ্বারা আমি পাইব ততটা আমারই ব্যাপ্তি, আমারই বিস্তৃতি। জগৎ যে পরিমাণে আমার অতীত সেই পরিমাণে আমিই ছোটো। সেইজন্য আমার মনোবৃত্তি, হৃদয়বৃত্তি, আমার কর্মশক্তি নিখিলকে কেবলই অধিক করিয়া অধিকার করিবার চেষ্টা করিতে থাকে। এমনি করিয়াই আমাদের সত্তা সত্যে ও শক্তিতে বিস্তৃত হওয়া উঠে।

 এই বিকাশের ব্যাপারে আমাদের সৌন্দর্যবোধ কোন্‌ কাজে লাগে? সে কি সত্যের যে বিশেষ অংশকে আমরা বিশেষ করিয়া সুন্দর বলি কেবল তাহাকেই আমাদের হৃদয়ের কাছে উজ্জ্বল করিয়া তুলিয়া বাকি অংশকে ম্লান ও তিরস্কৃত করিয়া দেয়? তা যদি হয় তবে তো সৌন্দর্য