পাতা:সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৮০
সাহিত্য

তেমনি। সাধারণ হইতে বিশেষ করিয়া লইলে সাধারণের বিরুদ্ধে সৌন্দর্যকে দাঁড় করানো হয়; তাহাকে সত্যের ঘর-শত্রু করিয়া তাহার সাহায্যে সামান্যের প্রতি আমাদের বিতৃষ্ণা জন্মাইবার উপায় করা হয়। বস্তুত সে জিনিসটা তখন সৌন্দর্যের যথার্থ ধর্মই পরিহার করে। ধর্মই বলো, সৌন্দর্যই বলো, যে-কোনো বড়ো জিনিসই বলো-না যখনই তাহাকে বেড়া দিয়া ঘিরিয়া একটু বিশেষ করিয়া লইবার চেষ্টা করা হয় তখনই তাহার স্বরূপটি নষ্ট হইয়া যায়। নদীকে আমার করিয়া লইবার জন্য বাঁধিয়া লইলে সে আর নদীই থকে না, সে পুকুর হইয়া পড়ে।

 এইরূপে সংসারে অনেক সৌন্দর্যকে সংকীর্ণ করিয়া তাহাকে ভোগবিলাসের অহংকারের ও মত্ততার সামগ্রী করিয়া তোলাতেই কোনো কোনো সম্প্রদায় সৌন্দর্যকে বিপদ বলিয়াই গণ্য করিয়াছে। তাহারা বলে, সৌন্দর্য কেবল কনকলঙ্কাপুরী মজাইবার জন্যই আছে।

 ঈশ্বরের প্রসাদে বিপদ কিসে নাই? জলে বিপদ, স্থলে বিপদ, আগুনে বিপদ, বাতাসে বিপদ। বিপদই আমাদের কাছে প্রত্যেক জিনিসের সত্য পরিচয় ঘটায়, তাহার ঠিক ব্যবহারটি শিখাইতে থাকে।

 ইহার উত্তরে কথা উঠিবে, জলে-স্থলে আগুনে-বাতাসে আমাদের এত প্রয়োজন যে তাহাদের নহিলে এক মুহূর্ত টিকিতে পারি না, সুতরাং সমস্ত বিপদ স্বীকার করিয়াই তাহাদিগকে সকল রকম করিয়া চিনিয়া লইতে হয়, কিন্তু সৌন্দর্যরসভোগ আমাদের পক্ষে অত্যাবশ্যক নহে, সুতরাং তাহা নিছক বিপদ, অতএব তাহার একমাত্র উদ্দেশ্য এই বুঝি—ঈশ্বর আমাদের মন পরীক্ষা করিবার জন্যই সৌন্দর্যের মায়ামৃগকে আমাদের সম্মুখে দৌড় করাইতেছেন; ইহার প্রলোভনে আমরা অসাবধান হইলেই জীবনের সারধনটি চুরি যায়!

 রক্ষা করো! ঈশ্বর পরীক্ষক এবং সংসার পরীক্ষাস্থল, এই-সমস্ত মিথ্যা বিভীষিকার কথা আর সহ্য হয় না। আমাদের নকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে