পাতা:সাহিত্য-সাধক-চরিতমালা দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রিক বিশেষত্ব Yጳቕ "বৃহৎ বনস্পত্তি যেমন ক্ষুদ্র বন-জঙ্গলের পরিবেষ্টন হইতে ক্রমেই শূন্ত আকাশে মন্তক তুলিয়া উঠে-বিস্তাসাগর সেইরূপ বয়োবৃদ্ধিসহকারে বঙ্গসমাজের সমস্ত অস্বাস্থ্যকর ক্ষুদ্রতাজাল হইতে ক্রমশঃই শস্বহীন সুদূর নির্জনে উত্থান করিয়াছিলেন ; সেখান হইতে তিনি তাপিতকে ছায়া এবং ক্ষুধিতকে ফল দান করিতেন ; কিন্তু আমাদের শত সহস্ৰ ক্ষণজীবী সভাসমিতির ঝিল্লিঝঙ্কার হইতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ছিলেন। ক্ষুধিত পীড়িত অনাথ অসহায়দের জন্য আজ তিনি বর্তমান নাই,–কিন্তু তাহার মহান চরিত্রের যে অক্ষয়বট বঙ্গভূমিতে রোপণ করিয়া গিয়াছেন তাহার তলদেশ সমস্ত বাঙালী জাতির তীর্থস্থান হইয়াছে। আমরা সেইখানে আসিয়া আমাদের তুচ্ছত ক্ষুদ্রত নিষ্ফল আড়ম্বর ভুলিয়া সূক্ষ্মতম তর্কজাল এবং স্কুলতম জড়ত্ব বিচ্ছিন্ন করিয়া, সরল, সবল, অটল মাহীত্ম্যের শিক্ষা লাভ করিয়া যাইব । আজ আমরা বিদ্যাসাগরকে কেবল বিদ্যা ও দয়ার আধার বলিয়৷ জানি, এই বৃহৎ পৃথিবীর সংস্রবে আসিয়া যতই আমরা মানুষ হইয়৷ উঠিব, যতই আমরা পুরুষের মত, দুর্গম বিস্তীর্ণ কৰ্ম্মক্ষেত্রে অগ্রসর হইতে থাকিব, বিচিত্র শৌর্যবীৰ্য মহত্বের সহিত মতই আমাদের প্রত্যক্ষ সন্নিহিতভাবে পরিচয় হইবে, ততই আমরা নিজের অন্তরের মধ্যে অনুভব করিতে থাকিব, যে, দয়া নহে, বিদ্যা নহে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চরিত্রে প্রধান গৌরব তাহার অজেয় পৌরুষ, তাহার অক্ষয় ম্যুত্ব এবং যতই তাহা অনুভব করিব ততই আমাদের শিক্ষা সম্পূর্ণ ও বিধাতার উদেশ্ব সফল হইবে, এবং বিদ্যাসাগরের চরিত্র বাঙ্গালীর জাতীয় জীবনে চিয়দিনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হইয়া থাকিবে।” ( 'সাধন, ভাদ্র ১৩০২ )