পাতা:সাহিত্য-সাধক-চরিতমালা পঞ্চম খণ্ড.pdf/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২০
কামিনী রায়

তাঁহার কবিতা পূর্ব্বে ভালবাসিয়াছেন, তাঁহার এখনও ভালবাসিতেছেন। নতন্ত্রের সাহিত্যবিলাসীগণ তাঁহার খুঁতগুলিই ধরিবেন এবং হয়তো গুণের যথেষ্ট সমাদর করিবেন না। সে জন্য আপনার আমার ক্ষু ইবার কারণ নাই। এক এক সময়ে এক একটা বিশেষ ধরণের লেখ। সাধারণের নিকট প্রিয় ও আদরণীয় হইয়া উঠে। আজকাল রবীন্দ্রযুগ—এ যুগে ‘আট’র দিকেই, বিশেষ রবীন্দ্রের অর্টের দিকেই মানুষের অধিক মনোযোগ। কবিতার প্রভাব { efect) কানের উপর যতটা, ততটা প্রাণের উপর হয় কি না কেহ দেখে না।

 রবীন্দ্রের অভ্যুদয়ের পূর্ব্বে হেমচন্দ্র বঙ্গের শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন। তাঁহার জ্বলন্ত স্বদেশপ্রীতি, নারীজাতির প্রতি তাঁহার শ্রদ্ধাপূর্ণ অকপট সহানুভূতি, দেশাচারের প্রতি ঘৃণা ও ধিক্কার, জাতীয় পরাধীনতায় ক্লেশ ও লজ্জাবোধ—এ সকল তাঁহার মত তেজস্বিতা সহৃদয়তার সহিত তাঁহার পূর্ব্বে কেহ প্রকাশ করিতে পারেন নাই। এখনকার বিচারে তাহার রচনার মধ্যে অনেক ত্রুটি পাওয়া যাইতে পারে, কিন্তু আমরা সেকালে কলা-কুশলতা (art) হইতে কবির উচ্ছ্বসিত হৃদয় (healt} দেখিয়া মুগ্ধ হইতাম! তাহার জলদগম্ভীর ভাষা শুনিয়া আমাদের তরুণ প্রাণ আনন্দ ও উৎসাহে নৃত্য করিয়া উঠিত। সেকালে মানুষের চিন্তা ও ভাব ভাষায় ভিতর দিয়া আপনাকে ঠেলিয়া বাহির করিতে চেষ্টা করিত; আজকাল যেন বাছা কাছি। বাধা বুলি আগে সাজাইয়া রাখিয়া চিন্তা ও ভাবকে তাহাদের মধ্যে টানিয়া অনিয়া বসাইবার চেষ্টা হয়। সেই জন্য ভাব জমাট হয় না, ভাসা ভাসা থাকিয়া যায়। কবিতাটি অনেকক্ষণ নাড়িয়া চাড়িয়। আবৃত্তি করিয়া, চক্ষে কর্ণে কেবল মিষ্ট ভাষাটুকুই ঠেকে, মনের ভিতরে গভীর সাড়া পাওয়া যায় না। এই কথাগুলি লিখিতে লিখিতে মনে হইতেছে যেন বক্তব্যটা স্পষ্ট