পাতা:সাহিত্য-সাধক-চরিতমালা পঞ্চম খণ্ড.pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পত্রাবলী 는 করিয়া বলিতে পারি নাই, নিজেকে ভুল বুঝাইতেছি । কেহ হয়তো মনে করিবেন আমি রবীন্দ্রনাথকে অগভীর বলিতেছি । কিন্তু তাহ নহে । তাহার সৰ্ব্বতোমুখী প্রতিভা, গীত-রচনায় অদ্ভুত অনন্ত সাধারণ ক্ষমতা, কেহই অস্বীকার করিতে পারে না । তাতার লেখনীম্পশে শুষ্ক বিষয়ও সরস ও মধুর হয়, যাহা কিছু তাহার কণ্ঠ দিয়া নিঃস্থত হয়, সঙ্গীতের রূপ ধারণ করে । কিন্তু গীতি-রচনায় তাহাকে মাপকাঠি করিয়া অন্ত সকলকে মাপিতে গেলে এবং তাহার অনুকরণে র্তাহার ব্যবহৃত পদগুলি সংগ্ৰহ করিয়া গান ও কবিতা রচনা করিতে গেলে পূৰ্ব্ব-কবিদের প্রতি এবং নিজেদের প্রতি অবিচার করা হয়। আজকাল কিন্তু তাহাই হইতেছে । তিনি যে রুচির স্বষ্টি করিয়াছেন, ইংরাজীতে বলিতে গেলে তিনি যে ‘স্কুলের’ প্ৰবৰ্ত্তক, তাহা গভীরতা ও সজীবতার তত সন্ধান করে না, মিষ্টত চাহে, স্পষ্টতা চাহে না । ছন্দ, সুর, নিখুঁত মিল, উপলাহত গিরি-স্রোতের কল-কল ধ্বনি, ইন্দ্ৰধনুর নানা বর্ণের ক্ষণিক খেল, আবছায়া স্বপ্নের আবেশ এই সব তাহাদের মতে কবিতায় একান্ত অবিশু্যক উপাদান । এগুলি উপাদান বটে এবং অতিশয় উপভোগ্য তাহারও ভুল নাই, কিন্তু কেবল এইগুলি দিয়াই হৃদয় পরিতৃপ্ত হয় না, আরও কিছু চাই । মুখ, দুঃখ, ক্ষুধা তৃষ্ণা, আশা আকাজক্ষা, গভীর আনন্দ ও তীব্র বেদন এই সকল দিয়া যে মানবজীবন তাহার একটা জাগ্ৰত অস্তিত্বও আছে—এবং তাহার একটা সরল সবল প্রকাশের উপযোগী কবিতাও আছে ও থাকিবে । অনেক কথা বলিয়া ফেলিলাম এবং স্পষ্টকে অস্পষ্ট ও সরলকে জটিলও হয়তো করিলাম। এইখানে অদ্যকার মত শেষ করি । কাল চিঠিখান আরম্ভ করিয়া শেষ করিতে পারি নাই । অন্ত কাজে উঠিয়া যাইতে হয় । আজ লিখিতে বসিয়া অযথা দীর্ঘ হইয়া পড়িল । তবুও একটা কথা বাকি রহিয়া গেল, সেটা এই, মহাকাব্য