পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (দ্বিতীয় ভাগ).pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

भ७०२ गांग ] বাঙ্গালা গদ্য সাহিত্য । : : ৩৯ : গদ্য কি রূপে স্তরের পর স্তর অতিক্ৰম করিয়া বিশুদ্ধভাবে পরিণত হইয়াছে, তাহা বুঝিতে হইলে পূৰ্ব্বতন গদ্য রচনার আলোচনা করিতে হয়। উদ্ধত গদ্যাংশসমূহে এই উদ্দেশ্য অনেক পরিমাণে সিদ্ধ হইবে। ইহাতে বুঝা যাইবে যে, পূৰ্ব্বতন গদ্য রচনা ক্ৰমে সংশে ধিত হইয়া আধুনিক বিশুদ্ধ রীতির অনুবৰ্ত্তিনী হইয়াছে। অধিকন্তু পূর্বে র্যাহারা আপনাদের রচনায় সরলভাবের পরিচয় দিয়া গিয়াছেন, তঁহাদের রচনাগত সেই সরলতাও বৰ্ত্তমান সময়ের রচনায় অক্ষুন্ন রহিয়াছে। যে সময়ে বাঙ্গালা গদ্যের আলোচনা ছিল না, . বাঙ্গালা গদ্য গন্থ বহুলপ্রচার ছিল না, লোকে গদ্যরচনায় তাদৃশ যত্নশীল ছিল না, সে সম{ে রাজীবলোচন প্রভৃতি যে ক্ষমতা ও নৈপুন্য দেখাইয়া গিয়াছেন, তাহাতে, তাহদের | বিস্তর প্রশংসা করিতে হয়, তাহদের পথ অবলম্বন করিয়া, বাঙ্গালা গদ্য ক্ৰমে উন্নতির দিকে অগ্রসর হইয়াছে। এক শতাব্দীরও অল্প কাল মধ্যে বাঙ্গালা গদ্য এক দিকে যে রূপ শক্তি সংগ্ৰহ করিয়াছে, অপর দিকে সেইরূপ সৌন্দৰ্য্যশালী হইয়াছে। যে সলিলরেখা পৰ্ব্বতের পাদদেশ হইতে সূক্ষ্ম রজতমালার ন্যায় বহির্গত হইয়া ধীরে ধীরে চলিতেছিল, তাহা অল্প সময়ের মধ্যে বিস্তৃতি লাভ করিয়া, আপনার অসামান্য শক্তিতে লোকের বিস্ময়োৎপাদনা করিতেছে। প্রতাপাদিত্যচরিত্র প্রকাশের সাত বৎসর পরে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের “রাজাবলী” প্রচারিত হয়। মৃত্যুঞ্জয় ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের প্রধান পণ্ডিত এবং নানাশাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন । তিনি ১৮০৮ অব্দে “রাজাবলী” এবং ১৮১৩ অব্দে “প্ৰবোধচন্দ্ৰি কা” প্ৰকাশ করেন। প্ৰবোধচন্দ্ৰিকার ভাষা দুরুচ্চাৰ্য্য উৎকট সংস্কৃত শব্দ এবং অপভ্ৰষ্ট গ্ৰাম্য কথায় পরিপূর্ণ। উহাতে “যেরূপ উচ্ছলক্ষ্মীকিরাত্যচ্ছনিঝরান্তঃ” প্রভৃতির ন্যায় হৃৎকম্পজনক শব্দমালার সমাবেশ আছে, সেইরূপ “ছড়ছড়াইয়া” প্রভৃতি গ্ৰাম্য শব্দেরও প্রয়োগ রহিয়াছে । বিভিন্ন শ্রেণীর শব্দাবলীর সমাবেশের ন্যায় প্ৰবোধচন্দ্ৰিকায় বিভিন্ন বিষয়ের বর্ণনাও আছে। যাহারা ইংলণ্ড হইতে আসিয়া এতদেশের রাজকাৰ্য্য নির্বাহ করিতেন, তাহাদিগকে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে বাঙ্গালা শিখিতে হইত। তঁহাদের শিক্ষার্থে প্ৰবোধচন্দ্ৰিক প্ৰণীত ও প্ৰকাশিত হইয়াছিল। একাধারে সাহিত্য, ব্যাকরণ, অলঙ্কার প্রভৃতি নানা বিষয়ের বর্ণনা এবং সংস্কৃত ও গ্রামা প্ৰভৃতি নানা শব্দের প্রয়োগ থাকিলে ভিন্নদেশীয় শিক্ষার্থিগণ সহজে বাঙ্গালা ভাষায় অভিজ্ঞতা লাভ করিতে পরিবেন। বলিয়াই বোধ হয়, গ্ৰন্থকার স্বপ্রণীত গ্ৰন্থ নানা বিষয়ে পরিপূর্ণ করিয়াছিলেন। সমালোচক গণ প্ৰবোধচন্দ্রিকার ভাষার প্রশংসা করেন না। বোধ হয়, দীর্ঘসমাসঘটিত উৎকট সংস্কৃত শব্দের সহিত গ্ৰাম্য শব্দের প্রয়োগ থাকাতেই প্ৰবোধচন্দ্ৰিকার ভাষা অপ্ৰীতিকর হঈয়াছে। বিদ্যালঙ্কারের অন্যতর গ্ৰন্থ-রাজাবলীতে কলির প্রারম্ভ হইতে ইংরেজের অধিকারী পৰ্যন্ত ভারতবর্ষের রাজা ও সম্রােটদিগের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বর্ণিত হইয়াছে। রাজাবলী প্ৰবোধচন্দ্রিকার চারি বৎসর পূর্বে প্ৰকাশিত হয় ; কিন্তু রাজাবলীর ভাষা অনে