পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (দ্বিতীয় ভাগ).pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৮. . সাহিত্য-পরিষদ-পত্রিকা। [ বৈশাখ পূৰ্ব্বকালীন গদ্যের অনেকাংশে সংস্কার হইয়াছে। অনেকে ঐ সকল সংবাদপত্রে লিখিয়া গদ্য রচনায় অভ্যস্ত হইয়াছেন। সংবাদপত্রের গদ্য শেষে দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ সম্পাদিত “সোমপ্রকাশে” সাতিশয় উৎকর্ষলাভ করিয়াছে। গদ্যরচনায় বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের যথোচিত ক্ষমতা ছিল। তঁহার গদ্য যেমন প্ৰাঞ্জল, সেইরূপ মনোহর। তাহার গ্রীসের ইতিহাস এবং রোমের ইতিহাসে তদীয় রচনাশক্তির সবিশেষ পরিচয় পাওয়া যায়। সোমপ্ৰকাশে রাজনীতি ও সমাজনীতিবিষয়ক প্ৰবন্ধ এবং সংবাদাদি এরূপ উৎকৃষ্ট প্ৰণালীতে লিখিত হইত যে, সোমপ্রকাশ হইতেই বাঙ্গালা সংবাদপত্র সভ্যসমাজে প্ৰসিদ্ধি লাভ করিয়াছে । ভাগীরথী যেমন হিমগিরির সঙ্কীর্ণ কািন্দর হইতে নিৰ্গত হইয়া ক্ৰমে স্বকীয় সঙ্কীর্ণ ভাবে বিসর্জন দিয়াছে এবং বহু জনপদ অতিক্ৰম পূর্বক শেষে শতমুখী হইয়া সাগরসঙ্গম লাভ করিয়াছে, বাঙ্গালা গদ্যরচনাও সেইরূপ সঙ্কীর্ণ ভাবস্রোত হইয়া উৎপন্ন হইয়া মৃত্যুঞ্জয় ও রামমোহন প্রভৃতির প্রতিভায় স্বকীয় সঙ্কীর্ণতা পরিত্যাগ করিয়াছে এবং বহু অবস্থা অতিক্রম পূর্বক বহুবিধ বিষয়ে বিভক্ত হইয়া শেষে বিদ্যাসাগরের সঙ্গমলাভে সমর্থ হইয়াছে। ভাগীরথীর সাগরসঙ্গমস্থল যেমন মহাতীৰ্থ হইয়া, শত শত তীর্থ যাত্রীকে পবিত্রভাবে পরিপূর্ণ করিতেছে, বাঙ্গালা গদ্যরচনার বিদ্যাসাগরসঙ্গমও সেইরূপ সাহিত্যসেবকদিগের মহাতীৰ্থস্বরূপ হইয়া তাহদিগকে বিশুদ্ধ ভাবে পুলকিত করিয়া তুলিতেছে। যে রচনা এক সময়ে উৎকট, দুৰ্ব্বোধ ও পূৰ্ব্বাপর সম্বন্ধ শূন্য ছিল, তাহা বিদ্যাসাগরের গুণে সংস্কৃত হয়, এবং বিদ্যাসাগরের শক্তিতে শক্তিসম্পন্ন হইয়া সাহিত্যক্ষেত্রে আপনার অনন্ত মহিমার পরিচয় দিতে থাকে। দুরুচ্চাৰ্য্য শব্দময়ী রচনা ললিতমধুর শব্দাবলীর বিকাশভূমি হয়। ঈশ্বর গুপ্ত প্রভৃতির অনুপ্রাসের আড়ম্বর বিদ্যাসাগরের লিপিক্ষমতায় অন্তহিত হয়। বিদ্যাসাগরের গদ্য প্ৰাঞ্জল ভাবের ও মাধুৰ্য্যগুণের দৃষ্টান্তস্থল। বিদ্যাসাগর বাঙ্গালা গদ্যের সৃষ্টিকৰ্ত্তা না হইলেণ্ড, সৌন্দৰ্যসম্পাদন ও পরিপুষ্টিসাধন জন্য উহার পিতৃস্থানীয়। বিদ্যাসাগর যেমন বাঙ্গালা গদ্য প্রাঞ্জল করেন, তত্ত্ববোধিনী সভার সংস্রবে। অক্ষয়কুমার সেইরূপ উহা ওজস্বী করিয়া তুলেন। অক্ষয়কুমারের গদ্য আবেগময় ও উদ্দীপনাপূর্ণ। অক্ষয়কুমার বাঙ্গালা গদ্যে এমন জীবনীশক্তি সমৰ্পণ করিয়াছেন যে, তাহাতে ভাষা তেজস্বিনী ও বেগবতী হইয়া খরস্রোতে প্রবাহিত হইতেছে। বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমার, উভয়েই সংস্কৃত ভাষার অবলম্বনে বাঙ্গালা গদ্য শ্ৰী সম্পন্ন করিয়াছেন। কিন্তু উভয়ের রচনা একভাবে গ্রথিত বা একশ্রেণীতে নিবেশিত হয় নাই। এক জনের গদ্য কোমলতাপূর্ণ, অপর জনের গদ্য উচ্ছাসের উদ্দীপক। একটি লাবণ্যময় পূর্ণচন্দ্ৰ, অপরটি জ্বালাময় মধ্যাহ্বতপন। একটি প্রশান্তভাবে হৃদয় নিন্ধ করে, অপরটি প্ৰদীপ্তভাবে হৃদয় প্ৰমত্ত করিয়া তুলে। বাঙ্গালা গদ্যে , যখন সংস্কৃতের এইরূপ আধিপত্য, তখন সাহিত্যক্ষেত্রে একটি মনস্বী