পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (পঞ্চম ভাগ).pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা । [ ২য় সংখ্যা । 92ܘܠ (s গোড়াতেই শাস্ত্রী মহাশয় ভুল বুঝিয়াছেন। তিনি বলিলেন যে, পর-শব্দ হইত্বে কিম্বা পার-শব্দ হইতে কি পরা শব্দ উৎপন্ন হইয়াছে ? অর্থাৎ আমি যেন প্ৰকারান্তরে বলিয়াছি যে, পর-শব্দ কিম্বা পার-শব্দ হইতে পরা-শব্দ উৎপন্ন হইয়াছে। তাল, নারিকেল এবং খেজুর এই সকল বৃক্ষের একইরূপ শাখাপত্রের ব্যবস্থা প্ৰণালী দেখিয়া আমি যদি বলি যে, উহাদের একটীির পুষ্টি এবং বৰ্দ্ধন সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক নিয়ম বুঝিতে পারিলে, সেই সঙ্গে অপর ९४ढिद्रअ তৎসংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক নিয়মের জ্ঞানলাভ হইতে পারে ; তবে তাহার অর্থ এ নহে যে, তালগাছ হইতে নারিকেল গাছ হইয়াছে অথবা নারিকেল গাছ হইতে তালগাছ হইয়াছে। ভ্ৰাতৃসম্বন্ধ স্বতন্ত্র, আর পিতাপুত্র সম্বন্ধ স্বতন্ত্র। তবে, ডারুইনের সিদ্ধান্ত যদি সত্য হয়, তবে উহারা সকলেই একই অত্যতিবৃদ্ধ প্ৰপিতামহের সন্তান-সন্ততি সে বিষয়ে আর সন্দেহ মাত্ৰ নাই। আমার মন্তব্য কথা কেবল এই যে, পর, পার এবং পরা তিনের মূলগত ঐক্য থাকিবার পক্ষে বিশেষ কোনো বাধা দৃষ্ট হয় না, যেহেতু তিনের মধ্যে খুবই ঘনিষ্ট শব্দসাদৃশ্য, আর, তেমনিই ঘনিষ্ট অর্থ-সাদৃশ্য। কঠোপনিষদে আছে “ন সাম্পরায়ঃ প্ৰতিভাতি বালং” ইহার অর্থ এই যে, মনুষ্যবর্গের পরলোকে গতির বিষয়ু বালকের মনে (অর্থাৎ চঞ্চলমতি ব্যক্তির মনে ) প্ৰতিভাত হয় না । সম্পরায় = সং+পর + আয় ; তাহার মধ্যে সং উপসর্গের লক্ষ্য সমগ্ৰ মনুষ্যজাতির প্রতি ; পরা-উপসর্গের লক্ষ্য পৃথিবীর ও-পারের প্রতি —দুর দেশের প্রতি ; আর, আয় শব্দের অর্থ স্পষ্টই গতি। “সম্পরায়” কিনা। সমগ্ৰ জনসাধারণের দূরদেশে গতি অর্থাৎ পরলোকে গতি। পরা-উপসর্গ এইরূপ দূরত্ব প্রতিপাদক । পর-শব্দও যে দূরত-ব্যঞ্জক তাহা আমি স্পষ্ট করিয়া দেখাইয়াছি। ঘর এবং পর, এপার ( এবং ওপার, এই দুই কথার উল্লেখ মাত্রেই পর-শব্দের দূরতা-অৰ্থ আপামর সাধারণ সকলেরই মনে তৎক্ষণাৎ মুদ্রাঙ্কিত হইয়া যায়। ইহা ব্যতীত পর-শব্দের আর একটা সুন্ম-ভাবের দুব্রতা-অৰ্থ আছে; তাহা এইরূপ ৪— স্বার্থপর বলিলে বুঝায়-স্বার্থের দিকে যাহার সবিশেষ টান বা গতি । এই যে সটান গতি, ইহা একপ্রকার সামনা-সামনি ভাবে সরল-রেখা-পথ অবলম্বন করে । এইরূপ সরল-রেখা-পথই জ্যামিতিক ভাষায় দূরত্ব বলিয়া সংজ্ঞিত হয়। যাহারা সূক্ষ্ম বিচারে নারাজ তঁহাদের পক্ষে ঘর এবং পর—এপার এবং পরপর—এই স্থূল দৃষ্টান্তই যথেষ্ট। সেতারে গৎ বাজাইবার সময় মিড়ের প্রয়ােজন হয় না, রাগ-রাগিণীর আলাপচারি করিবার সময়েই মিড় কাজে লাগে। যাহারা আলাপচারি করিতে ইচ্ছােক তঁহাদের উপকারার্থেই আমি শেষোক্ত দৃষ্টাস্তের উল্লেখ করিলাম। সেতারের মিড় যেমন এক সুর মাড়াইয়া আর এক সুয়ে অলক্ষিত পদসঞ্চারে বিলীন হয়, তেমনি পায় এবং পার এই দুই শব্দের ‘সটান গতি’ এই অর্থ অলক্ষিত পদসঞ্চারে দুৱতা অর্থে পৰ্যবসিত হইয়াছে। কুমার-সন্তবে মহাদেবের ধ্যানভঙ্গের বর্ণনা-স্থলে আছে৷—“ব্যাপারয়ামাস বিলোচনানি” অর্থাৎ দৃষ্টি-ছটা প্রেরণ করিলেন। ব্যাপার = বি + অ + পার এবং তাহার অর্থ প্রেরণ-ক্রিয়া । এইরূপ প্রেরণ-ভাবের সঙ্গে