পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y'o সাহিত্য-পরিষদ-পত্রিকা । [শ্রাবণ আমাদের দেশের যে দুইজন শাস্ত্ৰজ্ঞ প্ৰধান পণ্ডিত আপনাদের অসামান্য শাস্ত্ৰজ্ঞানে এক সময়ে সমগ্র সভ্যসমাজের বিস্ময়োৎপাদনা করিয়াছিলেন, র্যাহাদের জ্ঞানগভীরতার পরিমাণে ইউরোপের পণ্ডিতমণ্ডলীও সময়ে সময়ে অসমর্থ হইতেন, তঁহারা জাতীয় ভাষার আলোচনায় কখনও ঔদাস্য প্ৰকাশ করেন নাই। বিশ্ববিদ্যালয় তাহদের উভয়কেই সম্মানসূচক উপাধি দিয়া আপনার সন্মান বৃদ্ধি করিয়াছিলেন। ইংরেজী ভাষায় তাহদের অপরিসীম অভিজ্ঞতা ছিল, ইংরেজী রচনায় তাহারা ক্ষমতার একশেষ দেখাইতেন, ইংরেজী প্ৰণালীতে বিষয়সন্নিবেশে ও যুক্তিবিন্যাসে। তঁহারা সুদক্ষ ইংরেজ গ্রন্থকারদিগকেও বিস্মিত করিয়া তুলিতেন। তঁহাদের পাণ্ডিত্য, তঁহাদের রচনানৈপুণ্য, তঁহাদের বিচারপারিপাট্য দেখিয়া, ইউরোপের পণ্ডিতগণ র্তাহাদের প্রতি শ্রদ্ধাপ্ৰকাশ করিতেন। তথাপি তঁাহারা এক সময়ে জাতীয় ভাষার পরিপুষ্টি সাধনে যথোচিত যত্ন করিয়াছেন। তঁহাদের একজন সাময়িক পত্রে বিবিধ বিষয় লিপিবদ্ধ করিয়া বাঙ্গালা সাহিত্যসংসারে সুপরিচিত রহিয়াছেন। অপর জন ইংরেজী গ্ৰস্থ হইতে বঙ্গভাষায় বিবিধ বিষয়ের অনুবাদ করিয়া, গবৰ্ণরজেনেরল লর্ড হার্ডিঞ্জ এবং ইংলণ্ডের প্ৰধান রাজনীতিজ্ঞ স্যার রবার্ট পীলেরও ধন্যবাদের পাত্ৰ হইয়াছিলেন । আত্মোন্নতির সহিত সমাজের উৎকর্ষসাধন শিক্ষা’’র একটি উদ্দেশ্য । শিক্ষিত সম্প্রদায় যে সমাজের অন্তভুক্ত রহিয়াছেন, সেই সমাজের পরিচালক ও শিক্ষাদাতা হইবেন । সাহিত্যের পরিপুষ্টি ও বিস্তৃতি না হইলে জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার হয় না। সুতরাং জাতীয় সাহিত্যের উন্নতির দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধিধারীদিগের সর্বাগ্রে দৃষ্টি রাখা আবশ্যক। র্তাহারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেরূপ জ্ঞান সংগ্ৰহ করিবেন, সেইরূপ সংগৃহীত জ্ঞানে সমাজের উপকারসাধনে নিয়োজিত থাকিবেন । দুঃখের বিষয়, অধুনা রাজপুরুষগণ এবিষয়ে তাদৃশ মনোযোগবিধান করিতেছেন না। যাহারা অম্মদেশে শিক্ষার বিস্তারে ও শিক্ষার উন্নতিসাধনে ব্যাপৃত রহিয়াছেন, তঁহিদেরও অনেকে এতদ্দেশীয় সাহিত্যের যথোচিত উন্নতির জন্য যুবকদিগের উৎসাহবৰ্দ্ধনে অগ্রসর হইতেছে না। কিন্তু পূৰ্ব্বতন রাজপুরুষদিগের এবিষয়ে সমবেদনার অভাব বা ঔদাস্য ছিল না। তাহারা এতদ্দেশীয় সাহিত্যের উন্নতির দিকে সৰ্ব্বদা দৃষ্টি রাখিতেন। লর্ড ডালহৌসী ব্রিটিশ কোম্পানির রাজ্যবিস্তারে ব্যাপৃত থাকিয়াও এতদেশীয় ভাষার শ্ৰীবৃদ্ধিসাধনে মনোযোগী হইয়াছিলেন। তিনি এতদ্দেশীয় ভাষাশিক্ষা দিবার জন্য বিলাতের ডিরেক্টরদিগকে যে পত্র লিখেন, তাহ তদীয় রাজনীতিজ্ঞতার সবিশেষ পরিচয়স্থল। বঙ্গের প্রথম লেফটেনেণ্ট গবর্ণর হালিডে সাহেবও বাঙ্গালাভাষার উৎকৰ্যসম্পাদনের চেষ্টা করেন। পূৰ্ব্বতন শিক্ষাসমাজের অধ্যক্ষ কামেরণ সাহেল কলিকাতায় বিশ্ববিদ্যালয়স্থাপনের প্রস্তাবপ্রসঙ্গে উল্লেখ করিয়াছিলেন—“যদি গবৰ্ণমেণ্ট, শিক্ষার সম্বন্ধে কোনরূপ উৎসাহ দেন, তাহা হইলে এতদ্দেশীয় ভাষায় উদ্ভাবনী