পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ8 সাহিত্য-পরিষদ-পত্রিকা । [ হইতে পারে না । তঁহারা প্ৰতীচ্য ভূখণ্ডের পণ্ডিতমণ্ডলীর মধ্যে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করিতে পারেন না, যেহেতু তঁাহারা বিদেশীয় ভাষাবিজ্ঞানে উক্ত পণ্ডিতগণের সমকক্ষ নহেন। র্তাহারা আপনাদের জ্ঞানগরিমােয় কোন বিষয়ের অভাবমোচনেও সমর্থ হইতে পারেন না ; যেহেতু প্ৰতীচ্য সাহিত্যসংসার কোন বিষয়ে তঁহাদের মুখাপেক্ষী নহে। তঁহারা জ্ঞানসমুদ্রমন্থনপুৰ্ব্বক রত্বের উদ্ধার করিলেও প্রতীচ্য জনপদে চিরস্মরণীয় হইতে পারেন না, যেহেতু প্ৰতাচ্য ভাষা তাহদের প্রদত্ত ভুষণের জন্য লালায়িত নহে। কিন্তু তাহারা যদি মাতৃভাষার উন্নতির জন্য এইরূপ চেষ্টা করেন, তাহ হইলে তঁহাদের স্বদেশের যেরূপ উপকার হয়, বিদেশেও তঁহাদের সেইরূপ সম্মানলাভ হইতে পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধিধারী শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে সকলেই যে, জাতীয় ভাষার আলোচনায় অমনোযোগী রহিয়াছেন, একথা বলা উচিত নয়। অনেকে এখন মাতৃভাষায় সংগৃহীত জ্ঞােনরাশির প্রচার করিতে যত্নশীল হইয়াছেন। কেহ কেহ এবিষয়ে অসামান্য কৃতকাৰ্য্যতার পরিচয় দিয়া সাহিত্যসংসারে অপরিসীম। প্ৰাধান্য লাভ করিয়াছেন। বঙ্গের সর্বশ্ৰেষ্ঠ উপন্যাসলেখক রাজকীয় কাৰ্য্যে ব্যাপৃত থাকিয়াও, মাতৃভাষার হস্তে বহুমূল্য রত্ন রাশি সমৰ্পণ করিয়াছেন; প্রধান কবি আইনের কুট তর্কের মীমাংসায় নিযুক্ত হইয়াও, উৎকৃষ্ট কাব্যে জাতীয় ভাষা গৌরবান্বিত করিয়া তুলিয়াছেন; এবং প্রধান সমালোচক ও প্রধান গদ্যলেখক রাজকাৰ্য্যের জটিলতা ও সাংসারিক গোলযোগের মধ্যে মাতৃভাষার সেবা করিয়া সাধারণের শ্রদ্ধা ও প্রীতির পাত্ৰ হইয়াছেন। ইহারাই বিশ্ববিদ্যালয় ও মাতৃভূমির সুযোগ্য সন্তান। ইহাদের সংগৃহীত জ্ঞানই জাতীয় সাহিত্যের পরিচর্য্যারূপ মহত্তর কাৰ্য্যে প্রয়োজিত হইয়াছে। ইহারা আত্মপ্রাধান্য স্থাপনের জন্য কোনরূপ আড়ম্বর প্রকাশ করেন নাই, আত্মগৌরববৃদ্ধির জন্য কোনরূপ কৌশলবিস্তারে অগ্রসর হয়েন নাই, বা আত্মকীৰ্ত্তিপরিকীৰ্ত্তনের জন্য কোনরূপ অপকাৰ্য্যের প্রশ্রয় দেন নাই। প্ৰশংসা বা নিন্দাবাদে দৃকপাত না করিয়া, অপরের অনুরাগ বা বিরাগে ভ্ৰক্ষেপ না করিয়া ইহারা যে মহৎ কাৰ্য্যে ব্ৰতী হইয়াছেন, সেই কাৰ্য্যেই ইহাদের কীত্তি অক্ষয় হইয়া রহিয়াছে। ইহার স্বদেশীয়দিগের যেরূপ শিক্ষাদাতা হইয়াছেন, বিদেশীয়দিগকেও আপনাদের ভাষার মাধুৰ্য্য দেখাইয়া সেইরূপ বিস্মিত করিয়া তুলিয়াছেন । প্ৰত্যেক শিক্ষিত ব্যক্তিরই ইহাদের পদচিহ্নের অনুসরণ করা কীৰ্ত্তব্য । ইহারা যেমন পুরস্কার বা তিরস্কারের বিষয় না ভাবিয়া জাতীয় সাহিত্যক্ষেত্রে প্রবিষ্ট হইয়াছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত ব্যক্তিদিগেরও সেই ভাবে কাৰ্য্যে প্ৰবৃত্ত হওয়া আবশ্যক। ধীরতা ও একাগ্ৰতা সহকারে মহৎ কাৰ্য্যসম্পাদনে অগ্রসর হইলে অবশ্যই একদিন তঁহাদের যথোচিত পুরস্কার লাভ হইবে। অনেকে মনে করিতে পারেন, বাঙ্গালার আলোচনা বা বাঙ্গালা ভাষায় গ্রন্থপ্রণয়ন করিলে পাশ্চাত্য পণ্ডিতসমাজে তাঁহাদের সুনাম হুইবে না,-র্যাহাঁদের নিকটে তঁাহারা