পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8S সাহিত্য-পরিষদ-পত্রিকা । [ মাঘ বিস্ফারণ (refraction ) সম্ভব নহে, এই কথা সৰ্ব্ববাদিসম্মতরূপে গ্ৰাহ করাইয়াছিলেন বলিয়া কি বৈজ্ঞানিক সমাজের হাত পা বাধা ছিল ? আবার সেই সমিতি হইতেই ত ইংলণ্ডে ঠিক তাহার বিরুদ্ধ মত প্রচারিত হইল। আলোচনা দ্বারা যেমন সত্যের উদ্ভাবন হয়, তেমন আলোচনা দ্বারা শব্দের উপাদেয়ত্ব প্রতিপাদিত হয়; এই হেতু কোন স্থানে কোন নূতন লেখক কর্তৃক নূতন পরিভাষা ব্যবহৃত হইলে পরিষদে তাহার আলোচনা হইবে ;-ইহাই পরিষদের কার্য্য এবং এই হেতু পরিষদের জন্ম হইয়াছে, মনে করি। আমাদের দেশে সম্মিলিত কাৰ্য্য এবং কোন বিষয়ে ধারাবাহিক আলোচনার একান্ত অভাব বলিয়াই আমাদের জ্ঞান অপূর্ণ ও ভাষা অপুষ্ট রহিয়াছে। আলোচনাতে ভাবের সৃষ্টি ও ভাবের উদ্বেলতা হেতু উহার প্রকাশের চেষ্টাতে ভাষার পুষ্টি সাধিত হয়। পরিষদ ভাষাসঙ্কলনের ভার গ্ৰহণ করিয়াছেন, এক্ষণে তাহার। পূৰ্ব্বসোপান স্বরূপ ভাবের আলোচনার দ্বার উদঘাটন করিলেই পরিষদের চেষ্টা পূর্ণ সফলতা প্রাপ্ত হইবে। এ বিষয়ে আমি নিজে যাহা প্রত্যক্ষ করিয়াছি তাহা এই ;-আমি যখন কলেজে অধ্যয়ন করিতাম, তখন গণিতের বিজাতীয় সংজ্ঞাসমূহ আমার মনে যে ভাবের উদ্রেক করি ত, তাহা আমি নিজ ভাষায় ব্যক্তি করিতে চেষ্টা করিতাম। এইরূপে আমি বাঙ্গালায় গণিতের বহুসংখ্যক বিজাতীয় সংজ্ঞার অনুবাদ করিতে সমর্থ হইয়াছি। আমার বিশ্বাস, যাহারা যখন যে বিষয় চিন্তা করেন, তাহারা তখন সেই বিষয়ে অনেক পারিভাষিক শব্দ সঙ্কলন করিতে সমর্থ হয়েন। এই হেতু আমি মনে করি যে, ভাষা সঙ্কলন করিতে হইলে ভাবের আলোচনাই একমাত্ৰ প্ৰকৃষ্ট উপায় । রামেন্দ্র বাবুর প্রবন্ধে আরও একটী কথা আছে, তিনি তাহা সুস্পষ্ট বুঝাইয়া দেন নাই। তিনি দৃষ্টান্ত দিয়া দেখাইতে চেষ্টা করিয়াছেন যে, “আমাদের অনন্তবিভবশালী পূৰ্ব্বপুরুষেরা পরের নিকট ঋণ গ্ৰহণ করিতে কুষ্ঠিত হয়েন নাই।” লোকে আপনাদের অভাব অপেক্ষ অভাব পূরণের ক্ষমতা নুন এবং সেই অভাবপূরণ অবশ্য কৰ্ত্তব্য বোধ করিলেই, ঋণ করিয়া থাকে। র্যাহার অনন্ত বিভব রহিয়াছে, তিনি কেন ঋণ করিতে যাইবেন, তাহার কারণ সুস্পষ্ট বোধগম্য হয় না। যদি মানিয়াই লওয়া যায় যে, পূৰ্ব্ব পুরুষেরা তাহা করিয়া গিয়াছেন, তাহা হইলেও ইহা লক্ষিত হইতেছে যে, ঋণ করিয়াও কঁহার ঋণের দায়ে সৰ্ব্বস্ব খোয়ান নাই ; কারণ তঁহাদের ভাষা অনন্তবিভবশালী। কিন্তু আমাদের ক্ষীণপ্ৰাণ, অপূর্ণ ভাষা, কোন প্রকারে নিজের দিন নিৰ্বাহ করিয়া চলিতেছে ; তাহাতে ঋণগ্ৰস্ত হইলে ঋণের দায়ে সৰ্ব্বস্বাস্ত হইবার কথা । একান্ত দিন নিৰ্ব্বাহ না হইলে দায়ে পড়িয়া ভিক্ষা করা তােত দোয্যের হইবে না। কিন্তু আমাদের ভাষা একান্ত মরু নহে ; সংস্কৃতের সুশীতল নিৰ্ব্বরিণী নিয়ত উহার উর্বরতাসাধনে তৎপর রহিয়াছে। এরূপ স্থলে কর্ষণ দ্বারা যে পরিমাণে ফসল জন্মান যায়, তাহাতেই যত্নশীল হওয়া কৰ্ত্তব্য। ষ্টেয়ালি ছাড়িয়া বলিতে গেলে আমার মত এই যে, যে পৰ্য্যন্ত নিজের ভাষাতে সহজ শব্দ সঙ্কলন করা যাইতে পারে সে পৰ্য্যন্ত বিদেশীয় ভাষাতে শব্দসঙ্কলন প্রয়োজনীয় বোধ হয় না ।