পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* >oo> ] বাঙ্গালা রচনা । SAS অতএব বাঙ্গালা ভাষার সৌন্দৰ্য্যসম্পাদন ও গৌরববৰ্দ্ধন জন্য সংস্কৃতের সহিত উহার সম্বন্ধ রাখা উচিত। সুকৌশলে শব্দ বিন্যাস করিলে ভাষা। কখনও দুর্বোধি, দুরুচ্চাৰ্য্য বা শ্রুতিকঠোর হয় না। স্বৰ্গীয় বিদ্যাসাগর মহাশয় যে ভাবে বেতালপঞ্চবিংশতি লিখিয়াছেন, সে ভাবে শকুন্তলা লিখেন নাই। বেতালে সংস্কৃত শব্দের যেরূপ আড়ম্বর, শকুন্তলায় সেরূপ আড়ম্বর নাই। তাই বলিয়া বেতাল কখনও অপাঠ্য গ্রস্থের মধ্যে পরিগণিত হয় নাই। প্রচুর সংস্কৃত শব্দের সমাবেশ থাকিলেও ৬ অক্ষয়কুমারের গ্রন্থ পড়িয়া সহৃদয় পাঠকবর্গ মোহিত হইয়া থাকেন। স্বৰ্গীয় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিভায় বাঙ্গালা ভাষা সরল ও সাধারণের সুবোধ্য হইয়াছে। কিন্তু তিনি যে স্থানে বর্ণনাবৈচিত্র্যপ্রকাশে উদ্যত হইয়াছেন, সেই-- স্থানে সংস্কৃতের আশ্রয় গ্ৰহণ করিয়াছেন। এরূপ হইলেও তঁহার রচনা কোনও স্থলে ললিত্যহীন বা মাধুৰ্যবর্জিত হয় নাই। এই সংস্কৃতশব্দময়ী রচনাও সাধারণের হৃদয়গ্ৰাহিণী হইয়াছে। কাৰ্য্যের পরিবর্তে কায, স্বর্ণের পরিবর্তে সোনা, মস্তকের পরিবর্তে মাথা লিখিলেই ভাষার শক্তি বৃদ্ধি হয় না। এক স্থলে অপভ্রষ্ট শব্দের প্রয়োগ যেরূপ সঙ্গত হয়, স্থলান্তরে মূল সংস্কৃত শব্দের প্রয়োগ সেইরূপ সুসঙ্গত হইয়া থাকে। বাঙ্গালা রচনায় যে যে স্থলে সংস্কৃতের আনুগত্য স্বীকার করিতে হইবে, সেই সেই স্থলে অবস্থাবিশেষে সংস্কৃতের নিয়ম রক্ষা করা উচিত। যাহারা নিৰ্দ্ধনী, নিরপরাধী, মাতিবান, গতিবান প্রভৃতি পদের প্রয়োগ করেন, তঁহারা ভাষাবিষয়ে যেরূপ অসংযত, বিশুদ্ধ সংস্কৃত শব্দের বিশুদ্ধিরক্ষাতেও সেইরূপ অসাবধান। তাহদের রচনা অনেক স্থলে এইরূপ অসংযত ভাবেরই পরিচয় দিয়া থাকে। বস্তুতঃ খাটা সংস্কৃত শব্দের প্রয়োগস্থলে সংস্কৃত ব্যাকরণের যে নিয়ম বহুকাল হইতে বাঙ্গালায় প্রচলিত রহিয়াছে, তাহার মৰ্য্যাদা রক্ষা করা উচিত। বাঙ্গালায় হতভাগিনী, মহারথী প্রভৃতি কতকগুলি সংস্কৃতমূলক শব্দ চলিয়া আসিতেছে। এগুলি সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মসম্মত নয়। যে কারণে নিদ্ধনী প্রভৃতি পদ হয় না, সেই কারণে হতভাগিনী, মহারথী প্রভৃতি পদ সিদ্ধ হয় না। হতভাগিনীর স্থলে হতভাগা, মহারথীর স্থলে মহারথ হওয়া উচিত। অনেক সংস্কৃতানুরাগী সমালোচক সময়ে সময়ে এবিষয়ে তীব্র সমালোচনা করিয়া থাকেন। পক্ষান্তরে র্যাহারা ঐ সকল শব্দের প্রয়োগ করেন, তাহারা এই বলিয়া আত্মসমর্থন করিয়া থাকেন যে, বাঙ্গালায় “হতভাগা” এই লৌকিক শব্দটি দীর্ঘকাল প্ৰচলিত রহিয়াছে। উহা সচরাচর পুংলিঙ্গান্ত রূপে ব্যবহৃত হয়। এখন “হতভাগা” পদ স্ত্রীলিঙ্গান্তরূপে প্রয়োজিত হইলে লোকপ্ৰচলিত হতভাগ” শব্দটির সম্বন্ধে গোলযোগ ঘটিতে পারে। মহারথী প্রভৃতির সম্বন্ধে এরূপ আপত্তি হইতে পারে না। কিন্তু উহা দীর্ঘকাল হইতে চলিয়া আসিতেছে বলিয়া, প্রয়োগকারীরা উহার পরিবর্তনপ্ৰিয়াসী নহেন। যে সকল শব্দ বহুকাল ভাষার সহিত গ্রথিত রহিয়াছে, যে সকল শব্দের উচ্চারণ মাত্র হৃদয়ে একটি বিশেষ অর্থের উদ্বোধ হয়, আমাদের মতে তৎসমুদয়ের পরিবর্তন না করাই ভাল। sympathy শব্দের