পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭২ ৷৷ সাহিত্য-পরিষদ-পত্রিকা । [ भांघ অনুবাদে বাঙ্গালায় সহানুভূতি শব্দের উৎপত্তি হইয়াছে। এখন পুস্তকে, বক্তৃতায়, কথােপকথনে এই শব্দের ছড়াছড়ি দেখা যায়। কিন্তু এই লোকপ্ৰচলিত শব্দের সহিত সংস্কৃত ব্যাকরণের কিরূপ সম্বন্ধ ? “সমবেদনা” কথাটি “সহানুভূতি” অপেক্ষা ভাল। অধিকন্তু সহানুভূতি অপেক্ষা সমবেদনার সহিত সংস্কৃত ব্যাকরণের নিকট সম্বন্ধ। ইংরেজী sympathy শব্দে যে অর্থ পরিস্ফুট হয়, সমবেদনাও ঠিক সেই অর্থ প্রকাশ করে। এরূপ হইলেও বাঙ্গালায় সমবেদন অপেক্ষা সহানুভূতি শব্দেরই বহুলপ্রচার হইয়াছে। এখন কেহই এই প্ৰচলিত শব্দের পরিবর্তন করিতে বলিবেন না। বস্তুতঃ যাহা বহুকাল হইতে ভাষার সহিত মিশিয়া গিয়াছে, তাহা লইয়া টানাটানি না করাই ভাল। কিন্তু এস্থলে ইহাও বলা উচিত যে, যদি খাটী সংস্কৃত কথাগুলির সংস্কৃতভাবেই প্রয়োগ করিতে হয়, তাহা হইলে হতভাগিনী প্ৰভৃতির স্থলে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম রক্ষা করা সঙ্গত। আমরা পূর্বে বলিয়াছি, বাঙ্গালা ভাষায় সকল স্থলেই সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম রক্ষা না করিয়া, স্থলবিশেষে ঐ নিয়মের অনুসরণ করা ভাল। বাঙ্গালায় কতকগুলি সংস্কৃত শব্দ সংস্কৃত ভাবে প্রচলিত রহিয়াছে। আবার কতকগুলি সংস্কৃতমূলক শব্দ অসংস্কৃত ভাবে ব্যবহৃত হইতেছে। সভাসদ, বিপদ প্ৰভৃতি শব্দগুলির সংস্কৃত ভাবে প্রয়োগ হইলে সভাসৎ, বিপৎ প্রভৃতি হয়। অপূসরস, চক্ষুস প্রভৃতি শব্দ সংস্কৃতভাবে প্রয়োজিত হইলে অপূসরস:, চক্ষুঃ প্ৰভৃতি হইয়া থাকে, কিন্তু বাঙ্গালায় এই নিয়মের ব্যতিক্রম দেখা যায়। সভাসৎ, বিপৎ, চক্ষুঃ অপসারসঃ প্ৰভৃতির স্থলে বাঙ্গালায় সভাসদ, বিপদ, চক্ষু, অপসরা বা অপসর প্ৰভৃতি শব্দেরই প্ৰয়োগ হইতেছে। বাঙ্গালা ভাষায় ইহা অপপ্রয়োগ বলিয়া পরিগণিত হইতে পারে না। উচ্চারণের সুবিধা প্ৰভৃতির দিকে লক্ষ্য রাখিয়া, সংস্কৃত শব্দগুলি এইরূপে রূপান্তরিত করিয়া লওয়াই ভাল। লোকে সচরাচর বাঙ্গালায় চক্ষুলজ্জাই বলিয়া থাকে। কেহ চক্ষুর্লজ্জা বলিয়া পাণ্ডিত্যাভিমান প্ৰকাশ করে না। যিনি “গাভীটি প্রসব হইয়াছে।” না লিখিয়া, “গবীর বৎস প্ৰসূত হইয়াছে।” লিখেন, তিনি অসামান্য বৈয়াকরণ হইতে পারেন, কিন্তু বাঙ্গালা ভাষার সহিত র্তাহার কোন সম্বন্ধ নাই। যে কথাগুলি সংস্কৃত ভাবে প্ৰচলিত রহিয়াছে, তৎসমুদয় সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মে আবদ্ধ করিয়া রাখা উচিত। নিয়মের ব্যতিক্রম হইলে অপপ্রয়োগ বলিয়া সিদ্ধান্ত করা অসঙ্গত নয়। কিন্তু সর্বত্র সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়ম মানিলে চলিবে না। যে কথাগুলি অসংস্কৃত ভাবে প্রয়োজিত হইয়া, ভাষা সজীব, সতেজ ও লালিত্যবিশিষ্ট করিতেছে, তৎসমুদয় সংস্কৃত ব্যাকরণ রূপ শৃঙ্খলে আবদ্ধ করিয়া না রাখাই ভাল। বাঙ্গালায় সংস্কৃতের অনুরূপ। লিঙ্গবিচার নাই। বাঙ্গালায় বিশেষ্য যে লিঙ্গের হয়, বিশেষণ সর্বদা সেই লিঙ্গানুযায়ী হয় না। কিন্তু তাই বলিয়া বিশেষ্যবিশেষণে লিঙ্গবিচার একবারে উঠাইয়া দেওয়া আমাদের ক্ষুদ্রবুদ্ধিতে সঙ্গত বলিয়া বোধ হয় না। যুবতী নারী, সুন্দরী স্ত্রী, ষোড়শী কন্যা, এগুলি যেরূপ আছে, আমাদের বোধ হয়, চিরকাল সেইরূপই