পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (প্রথম খণ্ড).pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য-পরিষদ-পত্রিকা । [शालक्ष 8ܓ ছিল, সেই সাহিত্য আজ পৰ্য্যন্ত সজীব থাকিয়া, জনসাধারণকে সমবেদনায় সম্বদ্ধ করিতেছে। যদি অবিচ্ছিন্নভাবে জাতীয় সাহিত্যের অনুশীলন হয়, স্বদেশীয়দিগের অবিচ্ছিন্ন চেষ্টায় যদি জাতীয় সাহিত্যভাণ্ডার ক্ৰমে সমৃদ্ধ হইতে থাকে, তাহা হইলে পরস্পর সমবেদনাপার, পরস্পর একতাবদ্ধ, পরস্পর একাত্মভাবে অবস্থিত। এরূপ মহাজাতির আবির্ভাব ঘটিবে যে, তাহদের জাতীয় ভাবের অপূর্ব বিকাশ দেখিয়া, জগতের প্রধান প্রধান জাতিও বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হইবে, এবং কবিশ্রেষ্ঠ মিণ্টন যেমন স্বদেশে মুদ্রণস্বাধীনতার সমর্থনপ্রসঙ্গে মহাজাতির সমুখানের আশা করিয়াছিলেন, সেইরূপ আশান্বিতহৃদয়ে এই মহাজাতির সমুখানি চাহিয়া দেখিবে। পাঠ্য পুস্তকের সংখ্যাধিক্যে এবং এক সঙ্গে বহু বিষয়ের অধ্যয়নে জ্ঞানের গভীরতা জন্মে না । উহাতে কেবল পল্লব গ্রাহিতারই প্রশ্রয়বৃদ্ধি হয়। এ অংশে আম্মদেশের টোলের অধ্যাপনা প্ৰণালী উৎকৃষ্ট । র্যাহার যে বিষয়ের অনুশীলনে প্ৰবৃত্তি হয়, তিনি চতুষ্পাঠীতে সেই বিষয়ের আলোচনাতেই ব্যাপৃত থাকেন। এইরূপ অনুশীলনপ্ৰযুক্তি তাহার সেই বিষয়ে প্রগাঢ় অভিজ্ঞতা লাভ হয় ; তিনি জ্ঞানগভীরতায় পণ্ডিতসমাজে সম্মানিত হইতে থাকেন। যখন পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রচার হয় নাই, পাশ্চাত্য গ্ৰন্থ গৃহে গৃহে স্থানপরিগ্রহ করে নাই, তখন নবদ্বীপের বিশ্ববিদ্যালয় এইরূপেই শিক্ষার্থী দিগকে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন করিয়াছিল । সৰ্ব্বপ্রথম নবদ্বীপে ন্যায়শাস্ত্রের অনুশীলন হইত না। এ বিষয়ে মিথিলার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধান্য ছিল। অক্সফোর্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন পৗরীনগরী প্ৰভৃতির পণ্ডিতগণ সমাগত হইয়াছিলেন ; মিথিলার পণ্ডিতগণ সেইরূপ নবদ্বীপে উপস্থিত হয়েন নাই। তখন মুদ্রিত পুস্তক ছিল না , অধ্যাপকগণ যত্নসহকারে হস্তলিখিত পুস্তকারক্ষা করিতেন, উহা তাঁহাদের অমূল্যািরত্বের মধ্যে পরিগণিত ছিল । মিথিলার অধ্যাপকগণ এইরূপে ন্যায়শাস্তুসংক্রান্ত পুস্তক গুলি আপনাদের নিকটে রাখিতেন ; যতদিন ছাত্রেরা তঁহাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করিত, ততদিন তঁহাৱা যত্নসহকারে ঐ সকল গ্রন্থের অধ্যাপনা করিতেন। পাছে আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধান্য বিলুপ্ত হয়, এই আশঙ্কায় তাহারা কোন ছাত্ৰকে ন্যায়শাস্ত্রের কোন পুস্তক কোথাও লইয়া যাইতে দিতেন না। এই সময়ে নবদ্বীপের একজন অধ্যবসায়সম্পন্ন ছাত্র মিথিলায় গমন করিলেন। প্ৰগাঢ় অধ্যবসায়াবলে ন্যায়শাস্ত্র ছাত্রের কণ্ঠস্থ হইল। ছাত্র স্বদেশে প্রত্যাবৃত্ত হইয়া, কণ্ঠস্থ শাস্ত্ৰ লিপিবদ্ধ করিলেন এবং নবদ্বীপের বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যায়শাস্ত্রের অধ্যাপনায় প্ৰবৃত্ত হইলেন। অবিলম্বে নবদ্বীপ মিথিলার গৌরবম্পন্ধী হইয়া উঠিল । বেদকীৰ্ত্তিত পবিত্র পঞ্চনদ হইতে সুদূর দক্ষিণাপথ পৰ্য্যন্ত সমগ্ৰ ভূখণ্ডের ছাত্ৰগণ নবদ্বীপের বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাগত হইয়া, শাস্ত্রাভ্যাস করিতে লাগিল। এই ছাত্রের অক্ষয় কীৰ্ত্তিতে আজ পর্য্যন্ত বঙ্গদেশ গৌরবান্বিত হইতেছে, এবং এই ছাত্রের গভীর জ্ঞানের নিকটে পাশ্চাত্য জনপদের প্রসিদ্ধ পণ্ডিতগণও শ্রদ্ধাসহকারে অবনতমস্তক হইতেছেন।