পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (অষ্টম ভাগ ১-৪ পর্ব).pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষদের মাসিক কাৰ্য্যবিবরণী । ২॥৩/or জন্য পরিষৎ রজনী বাবুর নিকট অশেষ ঋণী। পরিষদের উন্নতির জন্য রুগ্ন শরীর লইয়া, জমী ভিক্ষা করিতে যাওয়াই তেঁাহার শেষ কাৰ্য্য। পরিষদের সম্পর্কেই তাহার সহিত আমার প্ৰথম পরিচয় হয়, তৎপূর্বে আমি তাহার ওজস্বিনী ভাষায় চমৎকৃত হইয়াছিলাম। রজনী বাবু স্বীয় স্বভাবগুণে লোককে এতটা আপনার করিয়া লইতেন যে, আমার সহিত র্তাহার এই অল্প দিনের আলাপ হইলেও তিনি আমায় এবং আমি তাকে আকৃত্ৰিম সুহৃদ বলিয়া জানিতাম। হৃদয়ের সবটা দেখিয়া বন্ধুত্ব স্থাপন করিতে হইলে, সেরূপ অমায়িক লোক অল্প পাওয়া যায়। রজনী বাবুর প্রকৃতিও সেইরূপই ছিল, তিনি সকলকেই আপনার হৃদয়ের সবটা দেখিতে দিতেন, যে আবার তঁাহার মত সরল-হৃদয়ে তাহার সরলতা গ্ৰহণ করিতে পারিত, সে বরাবর তঁাহার সহিত অকৃত্রিম বন্ধুতা উপভোগ করিত। তিনি অকৃত্রিম সাহিত্য-সেবক, এক কথায়, সাহিত্য-ব্ৰতী ছিলেন। আমাদের সাহিত্য-সেবা সখের, অবসরে সেবনীয়, তঁহার তাহ ছিল না। তঁহাকে এক সময়ে রাজ-কাৰ্য্যে নিয়োগের ব্যবস্থা হইয়াছিল, পাছে রাজকাৰ্য্যে সাহিত্যসেবার হানি ঘটে, এই ভাবিয়া রজনীকান্ত সেই আপাত-মানাস্পদ কাৰ্য্য গ্ৰহণ করিলেন না । লক্ষ্মী সরস্বতীর সপত্নী । সরস্বতীর বরপুত্রেরা বিমাতা লক্ষ্মীর অনুগ্রহে প্ৰায়ই বঞ্চিত হন, কিন্তু র্যাহার রজনীকান্তের মত সাহিত্য-ব্ৰতী হন, লক্ষ্মীও তাহদের গাত্রে পদ্মহন্ত বুলাইয়া থাকেন। এক রজনীকান্ত ইহার দৃষ্টান্ত নহে, আমাদের সভাপতি মহাশয় তাহার অন্যতম দৃষ্টান্ত । অক্ষয়কুমার দত্তের ওজস্বিতা ও বিদ্যাসাগরের মনোজ্ঞতা একত্র রজনীতে বৰ্ত্তমান ছিল। অপরের ভাষা অন্য হিসাবে শ্রেষ্ঠ হইতে পারে, কিন্তু রজনী বাবুর ভাষা ওজস্বিতা ও মনোজ্ঞতা গুণে বড়ই মনোরম ৷ ঐতিহাসিক সাহিত্য লেখার তিনিই পথ-প্ৰদৰ্শক । পাদরীরা বাঙ্গালা-সাহিত্য রচনায় পথ-প্ৰদৰ্শক ছিলেন বটে, কিন্তু ইহা আমাদের পরম সুখের বিষয় যে ঐতিহাসিক সাহিত্যের প্রবর্তক একজন বাঙ্গালী এবং তিনিই আমাদের রজনী বাবু। রজনী বাবুর সহিত যিনি আলাপ করিয়াছেন, তিনি জানিয়াছেন যে, নিরীহ,তাই রজনী বাবুর বিশিষ্ট গুণ। সম্প্রতি এই নিরীহ-লেখকের লেখা হইতে নাকি রাজদ্রোহ-সুচক কথা বাহির করা: হইয়াছে। ইহা হইতে বুঝা যায়, আমাদের দেশে সাহিত্য-সেবাতেও কত বাধা বিপত্তি আছে, আর সেই সমস্ত বাধা বিপত্তি উত্তীৰ্ণ হইয়া পণ্ডিত রজনীকান্তকে কত কষ্টে সফলতা লাভ করিতে হইয়াছিল। , অতঃপর শ্ৰীযুক্ত সুরেশচন্দ্র সমাজপতি মহাশয় প্রস্তাব করিলেন, পণ্ডিত রজনীকান্তের একখানি ছবি পরিষৎ সভাগৃহে রক্ষিত হউক। ] সভাপতি মহাশয় এই প্ৰস্তাবের সমর্থনা করিয়া বলিলেন, কেবল ছবি রাখিলেই উপযুক্ত হইবে না। একটা সাধারণের উপযোগী বা ছাত্ৰগণের উপকারী কোনরূপ বৃত্তি নিৰ্দ্ধারণ করিতে পারিলে ভাল হয়। (এই স্থলে সভাপতি মহাশয় ছবির জন্য কত ব্যয় পড়িবে, জানিতে চাহিলে, সুরেশ বাবু আনুমানিক ৫০২ টাকার কথা বলিলেন ) । সভাপতি মহাশয় ।