পাতা:সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (তৃতীয় ভাগ).pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাইকেল মধুসুদন দত্ত। শ্ৰীযুক্ত যোগীন্দ্রনাথ বসু বি. এ. প্রণীত মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনচরিত। মেঘনাদবধে প্রকাশিত মধুসুদন দত্তের জীবনবৃত্তান্ত । বাঙ্গালা ভাষা ও বাঙ্গালা সাহিত্যবিষয়ক প্ৰস্তাব । ইত্যাদি । প্রাচীন সময়ে হিন্দু যখন শিক্ষার্থী হইয়া, গুরুগৃহে অবস্থিতি করিতেন, তখন তঁহাকে ব্ৰহ্মচৰ্য্যব্রতের পালন করিতে হইত। নানাশাস্ত্ৰে অভিজ্ঞ তালাভের সহিত কষ্টসহিষ্ণুতা, বিলাসবিদ্বেষ ও চিত্তসংযমে অভ্যস্ত হওয়া এই ব্ৰতের একমাত্র উদেশ্য ছিল । প্রাচীন ভারতে সভ্যতার প্ৰবৰ্ত্তক ঋষিকুলে আমরা যে, বিষয়বিরাগের সহিত অসামান্য প্রতিভার বিকাশ দেখিতে পাই, ব্ৰহ্মচৰ্য্যই তাহার একমাত্র কারণ। হিন্দুর এই প্ৰাচীন শিক্ষাপদ্ধতি না থাকিলে ভারতবর্ষ বোধ হয়, প্ৰকৃত মহত্ত্বের আশ্রয়স্থল হইত না । বিদ্যায় মানুষের বুদ্ধি মার্জিত হইতে পারে ; বহুদর্শনে মানুষের চিত্তের প্রসারণ ঘটিতে পারে ; গভীর ভাবস্রোতে মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি উন্নত হইয়া উঠিতে পারে ; কিন্তু চিত্তসংযমের অভাবে মানুষ কখনও মনুষ্যত্বের অধিকারী হইতে পারে না। উচ্ছঙ্খল মানুষ আবৰ্ত্তমূর্ণিত তৃণখণ্ডের ন্যায় কেবল এ দিকে ও দিকে ঘুরিয়া বেড়ায় ; তাহার অপূৰ্ব্ব জ্ঞানাগরিমা, তাহার অসামান্য ধ্রুতিভা, তাহার অপরিসীম মানসিক শক্তি, কিছুতেই তঁহাকে শান্তির অমৃতময় ক্ৰোড়ে স্থাপন করিতে পারে না। প্ৰতিভায় তাহার অন্তঃকরণ নিরন্তর প্রদীপ্ত থাকিতে পারে, কিন্তু শান্তির অভাবে তাহার স্থিরতা ঘটিতে পারে না । তঁহার মনোমন্দিরের এক দিকে যেমন উজ্জল আলৈাক ; অপর দিকে সেইরূপ ঘোর অন্ধকার। তিনি আলোকের সাহায্যে অতীত ও বর্তমান কালের মনীষীদিগের মানসপট সূক্ষ্মানুসূক্ষ্মীরূপে দেখিতে পারেন ; কিন্তু উহ। তাহার চিরাভীষ্ট রত্বের অন্বেষণে সহায়*হইতে পারে না। বিশুদ্ধ সুখ ও আরামদায়িনী শান্তির পথ তাহার সমক্ষে ঘোর অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকে। তঁহার মনোমন্দিরের উজ্জল আলোক এই অন্ধকারভেদে সমর্থ হয় না। তিনি মানসিক শক্তিতে অপরাজেয় হইয়াও, হৃদয়ের শক্তির অভাবে ঐ অন্ধকারস্তাপে নিমজ্জিত থাকেন। অপরে তাহার মানসক্ষেত্রের আলোকে বিমোহিত হইয়া, তঁহাকে যেমন প্ৰীতিপুষ্পাঞ্জলি দিতে অগ্রসর হয়, তাহার হৃদয়ের গভীর অন্ধকারে সেইরূপ বিস্মিত ও বিরক্ত হইয়া, তদীয় সত্ত্বগুণময় ধৰ্ম্মভাবের অভাব জন্য দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিতে থাকে। লোকসমাজে তাহার প্রশংসা লাভ হয়, কিন্তু তঁহার অদৃষ্ট লোকের হৃদয়গত শ্রদ্ধালাভ ঘাঁটিয়া উঠে না। তিনি। মানসিক আলোকের অধিকারী হইলেও, হৃদয়ের গভীর তমঃসাগরে নিমগ্ন হইয়া, অন্তিম কাল পৰ্য্যস্ত কেবল “জ্যোতিঃ আরও জ্যোতিঃ” বলিয়া কাতর কণ্ঠে রোদন করিয়া থাকেন। •