পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফলে মক্তব এখন চাপা অসন্তোষের জিন্মায় ভাসছে । একটা কিছু ঘটবে। সামনে মক্তব্য ইনসপেকশন হবে। এই অবস্থায় সুখবাসের বিয়ের কথা উঠল । গিয়াসজী রাজি হয়েছেন । জাহেদার বয়স এগারো বছর । রোগা পাতলা গড়ন, কিন্তু মুখশ্ৰী অপূর্ব। ভয়ানক মিষ্টি আদিল । কাঁচা সোনার রঙ । মক্তবে পড়ে । বাপের সঙ্গে থাকে । তার একটা হিল্লে দরকার ছিল। গিয়াসজীর আত্মপ্রতিষ্ঠার কারণেও সুখডহরিতেই বড় গুষ্টি দেখে মেয়ের শাদী দেওয়া এই মুহুর্তে জরুরি হয়ে উঠল। নইলে তাঁর চাকরি থাকে। কিনা সন্দেহ । সুখৰাসের গুষ্টি গিয়াসজীর হয়ে লড়বে। দরকার হলে লাঠি আদি চলবে। তাই বেশ । কথা কি বুঝলে সুখবাস ? সুখবাস বাপ-চাচার আলোচনা শুনতে শুনতে অনুভব করছিল, তার বুকের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ হচ্ছে । জাহেদাবি নরম ভেজা হাসিখুশি মুখখানা মনে পড়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে অসহায় গিয়াসজীর মুখটাও মনের ভেতর ভেসে উঠছে। গিয়াসজীর বয়েস হয়েছে । জাহেদা তাঁর দ্বিতীয় সন্তান । প্রথম ও দ্বিতীয় দুটি বউই কপাল গুণে টেকেনি। মরে গিয়েছে। প্রথম বউয়েরও একটি মেয়ে আছে শোনা যায় । বিয়ে হয়ে স্বামীর ঘর করছে । দীর্ঘদিন পর গিয়াসজী দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তারই মেয়ে জাহেদা । জাহেদার জন্মের চার বছর পর দ্বিতীয় বউ মারা যায়। বউয়েব মৃত্যুর দু'বছর বাদে গিয়াসজী মেয়েকে সঙ্গে ক’রে সুখডহরি চলে আসেন । মেয়ের বিয়ে দিয়ে তিনি সুখডহরিতেই স্থায়ী বসবাস করবেন এমন বাসনার কথা সুখডহরির সকলেই জানে । মগরাহটি ফিরে যাওয়ার কোনো চাহিদা গিয়াসজীর নেই। মগরহাটে সামান্য জমি জিরাত আছে, সেইসব বিক্রী করে দিয়ে তিনি সুখডহরিতেই থেকে যাবেন । কেউ যদি দয়া ক’রে বয়স্থ কোনো মেয়ের সঙ্গে গিয়াসজীর নিকে দেয়, সেই ব্যাপারেও মৌলবীর কোনো আপত্তি আছে বলে মনে হয় না । সুখবাসদের গুষ্টি মধ্যেই তেমন স্বামী পরিত্যক্তা রাড়ী (বিধবা) মেয়ের সন্ধান আছে। সেইসব কথাবাতাও উঠছে ক্রমশ । সুখবাস মনে মনে গিয়াসজীর দােমাদ হয়ে গিয়েছে এই মুহুর্তে । সকলেই যখন আলোচনায় মশগুল সুখবাস তখন ছোট ভাবীর ঘরে ঢুকে পকেট ট্রানজিসটারখান টেবিল থেকে উঠিয়ে নেয় । গতবছর অগ্রজ ছোটভাইজান আরিফতের বিয়ে হয়েছে, ওর বুকে অনেক চুল আছে। ছোট বউ বড়ই রসিকা, চোখে ঠমক দিয়ে হাসে। সেই হাসি দেখে সুখবাস লজ্জা পায়। ঘর থেকে এক লাফে উঠোনে নেমে আসে। পেছন থেকে খিলখিল হাসি। পথে পালিয়ে আসে সুখবাস । ট্রানজিসটর খুলে দেয়। জোরে দম বাড়িয়ে দিয়ে কানে চেপে ধরে। রেডিও S.