পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেই দৃশ্য মনে ভাসে। আজও শিরিনের কান্না আমি দেখতে পাই ছয় মাঝে একদিন আবার সাদিকুল এসেছিলেন । বাবা ধমপ্রচারে বেরিয়েছিলেন খাবার তৈরি করতে হয়েছিল শিরিনকে । বাবা শিরিনের তৈরি খাবার ছাড়া নেবেন না ; শিরিন অসহ্য হয়ে উঠতেন । পাঁচ বেলা নামাজ পড়তে চাইতেন না । তা নিয়েও বাড়িতে বাবার সাথে অশান্তি । অবশ্য আমি ছাত্রী বলে সবকিছুরই বাইরে থাকার অধিকার ছিল আমার । যাই হােক । বাবা কোন এক পীরের কাছেও গিয়েছিলেন সেবার । লীগের লোকেরা বাড়িতে এসে বাবাকে না। পেয়ে মন খারাপ করেছিলেন । রাত্ৰিভর ওঁরা আলোচনা করেন । ঘন ঘন চা দিতে হয় । খাবার দিতে হয় । সবই দিতে হয় শিরিনকে রাত্রি জেগে । বোরকা খুলতে হয়, আর পরতে হয় । শিরিন দম বন্ধ করে কেবলই বলেন, মাই লাইফ ইজ হেল । জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি। কী করে হাসি, মিনু ? শিরিনকে মাঝে-মাঝে বাবাকে পুঁথি পড়ে শোনাতে হত-আহারে দুলদুলি ঘোড়া, জোর করো থোড়ী-থোড়া, যেতে হবে টুঙ্গির শহর। সেই কথাগুলো আবৃত্তি করে শিরিন আপন মনে বলে উঠতেন, কিন্তু কোথায় যাব আমি ? সেই সময় সাদিকুল এলেন । তাঁকে দেখেই শিরিনের প্রথম প্রশ্ন-ফিমেল লিবটা আমি বুঝতে পারিনি। আর-একবার বুঝিয়ে বলবেন ? সাদিক বললেন--মিনু বরং ওদিকে যাক । --কেন ? ও-ও শুনে রাখুক । কাজ দেবে। অবশ্য সাবধানে বলবেন । -আমি কি অসাবধানে কিছু বলেছি কখনও ? সাদিকুল চোখ বিস্ফারিত করে হাসলেন । শিরিন বললেন-না না, তা কেন ? তবে কিনা, আরো বেশি সন্তপণে, সতর্ক আর সজাগ হয়ে শুনতে চাইছি। তো ! আমি শুধালাম-এইসব কথা শুনে তুমি কী করবে। খালামা ? জ্ঞান মানুষকে দুঃখ দেয় জান না ? শিরিন বললেন-আমি যে দুঃখই চাই, মিনু। জেনে দুঃখ পাওয়াও আনন্দের। না জেনে কেবল তারাই সুখী হয়, যাদের মস্তিষ্ক মানুষের নয় । -বাঃ চমৎকার বলেছেন । আমি বলি, নলেজ ইজ পাওয়ার । বললেন সাদিক । শিরিন তখন হঠাৎ করে প্রস্তাব করলেন-চালো আমরা ছাতে যাই । VO)