পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আকাশের মিটমিটি তারার সাথে কইব কথা । নাইবা তুমি এলে । গান শুনতে শুনতে এগিয়ে চলে সুখবাস । আকাশে প্রকাণ্ড চাঁদ ঝুলছে, জ্যোৎস্নায় প্লাবিত পথ । কেমন নেশা জেগে যায়। হাঁটতে হাঁটতে সুখবাস মক্তবের কাছে চলে আসে । বিরাট বাড়ি । লম্বা দোতলা । মক্তবের নিচের তলা বহিরাগত তালবিলিম (ছাত্র) আর মৌলবী মৌলানায় পূর্ণ। নিচের তলায় বাস । উপর তলায় পড়াশুনো । সকাল সাড়ে নয়টা আদি ক্লাস চলে । শতকরা সত্তর ভাগ মেয়ে, তিরিশ ভাগ ছেলে । এইসব ছাত্রছাত্রীর চল্লিশ ভাগ দশটার পর স্থানীয় জুনিয়র হাইস্কুলে সাধারণ শিক্ষার জন্য পড়তে যায়। ফলে মক্তব মনিং। হাইস্কুল ডে। এইভাবে চলছে। বাকি ষাট ভাগ মক্তব ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষা নেয় না। যাই হােক, মক্তবের কাছে চলে আসে সুখবাস । আজ তাঁর এশা (মধ্যরাত্রির আগের নামাজ) পড়া হয়নি এখনো । এখন রাত সাড়ে দশটা ৷ পথ নির্জন । হঠাৎ মক্তবের নিচের তলার ঘর থেকে সোভানী খতিবের কড়া ধমক শুনতে পায় সুখবাস। খতিব মৌলবীদের সঙ্গে নিশ্চয়ই আডা (হাদীসী আড়া) দিচ্ছে । তাহাজুদ (মধ্যরাত্রির নামাজ) পড়বে মসজিদে গিয়ে, তারপর কোনোদিন বাড়ি ফেরে, নয়ত মসজিদেই শুয়ে যায় । খতিব গর্জন ক'রে ওঠে-রেডিও থামাও সুখবাস । জ্যোৎস্নায় সুখবাসকে চিনে ফেলেছে খতিব । রাগে গরগর করছে। বলছে-তুমি মুসলমানের ছেলে, তালবিলিম । মাদ্রাসার (যদিও আসলে মক্তব) পাশ দিয়ে নোংরা গান বাজিয়ে যাও, ভয় করে না ? এভাবে গান শুনলে চল্লিশ বছরের এবাদত (উপাসনা) নষ্ট হয়, জানো না ? এজিদের বংশ নইলে এই শখ করা হবে, আসলে যে সিমার । হাতে পাওয়ার থাকলে মাদ্রাসায় ঢুকতে দিতাম না । ছিঃ । সশব্দে জানােলা বন্ধ হয় । রেডিও থেমে যায় । সুখবাসের মনে হয়, বুকের মধ্যে কেউ নিশ্চয় বসে আছে । বন্দী হয়ে আছে । আপন মনে গানটা শুনছিল । রেডিও-য় সুখবাস নব ঘুরিয়ে যায়। আরব থেকে আরবী কণ্ঠস্বর ভেসে ওঠে না । ঢাকা থেকে নাতে রাজুল বা খোদাকে হমদ শোনা যায় না । হঠাৎ কেন যেন তার খতিবের গলা টিপে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করে । নিজেকে এখন তার সিমারই মনে হয় । খুব দ্রুত সে বাড়ি ফিরে নামাজে দাঁড়ায় । তাবত গা থারথার ক'রে কাপে । যেন জ্বর এসে গিয়েছে । বিয়ের রাত। মনে পড়ছে সন্ধ্যাবেল উঠোনে পাশাপাশি দুটি চেয়ারে S8