পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেখতে পায় । সিমারকে ক্ষমা করে দেয় । দিনের বেলা সহবাসে রাজি হয় । সহবাস নয় । যৌন-ক্রিয়া । শেষ হওয়ার সাথে সাথে ঘরের মধ্যে থাকে না । উঠে পড়ে । দরজা খুলে বাইরে চলে গিয়ে দ্রুত হাতে কীসব কাজ করতে থাকে। কোনো কাজ না পেলে অযথা ঝাঁট দেয় । মুখ গভীর। অপমানিত । অ-খুশি । কিন্তু মদিনা যত কষ্টই হােক মরবে না। সেই প্ৰতিজ্ঞার শিখা মদিনার চােখে জুলতে দেখা যায়। মদিনা সবল পুষ্ট দুদন্তি যুবতী । সে কি বুঝবে ? বুঝবে না। জাহেদা কী আপ্ৰাণ চেষ্টা করেছিল সুখবাসকে তৃপ্ত করার । সুখবাস বিড়বিড় করে-জানো, কেমন ক’রে মেরে ফেলি ? নীরবে মুখ বুজে অত্যাচার সইছিল। তার শরীর ছিল ঠাণ্ডা। আর ভদ্র । হাল্কা আর ফুলের মতন । গন্ধিত আর পলকা । প্রথমে একটু আর্তনাদ করছিল । বিপদে ভয়ে যেমন মানুষ আল্লা আল্লা করে, তাই করছিল । বিড়বিড় করে দোয়া দরুদ পড়ছিল। ভাবছিল কোবানের আয়াতে বোধহয় মুহুর্তে পূণাঙ্গ যুবতী হয়ে ওঠার শক্তি আছে। কিন্তু খোদা তাকে বাঁচাতে পারেনি একসময় সে জোরে আর্তনাদ করেছিল । তখন সুখবাস মুখে কাপড় ঠেসে দিয়েছিল । এক সময় হঠাৎ খেয়াল হল, জাহেদা কেমন নিঃশব্দ । ঠাণ্ডা। কাঁদছে না। জাহেদা মরে গিয়েছে। কিন্তু সে চেষ্টা করেছিল সুখবাসের বাসনা পূরণের। যা তার কর্তব্য ছিল । গিয়াসজী কি সে কারণেই সুখবাসকে ক্ষমা করতে পেরেছেন ? সমাজ কি সে-কারণেই এই ঘটনার তেমন কোনো গুরুত্ব দেয়নি ? আচ্ছা এটাই কি নিয়ম ? জাহেদা কি সত্যিই খুব তুচ্ছ জীব ? তার মৃত্যু কি কিছু নয় ? সুখবাস ভাবে, কিছু নয়। কোনো ঘটনা নয়। অমন হয়ই। হতেই পারে । লোকে কিছু ভাবে না। অতএব মদিনা বলছে, জাহেদা আসবে। ধ্যান করলে আসবে নিশ্চয় । দুমুঠো ভাতের জন্য নয়। তবু কেন আসবে সে ? আমি তো প্ল্যান করে মারিনি । সিমার, তাই মেরে ফেলেছি { ভেবেছিল সুখবাস । জীবনের চাপে যেমন আদিম নিস্তরঙ্গ মস্তিষ্কেও অযুত অস্পষ্ট ভাবনা নড়ে উঠেছিল । মদিনা চেষ্টা করছিল তার বিশ্বাস ও সাধ্যমতো । একটা পবিত্র বাতাবরণ রচনা করে তুলত মধ্যরাতে। তাহাজুদ-নামাজে স্বামীকে প্রতিষ্ঠিত ও ধ্যানস্থ করতে চাইত । আগরবাতি জ্বেলে দিয়ে বলত-নামাজে খোদার কাছে হাত তুলে কাঁদো । মোনাজাত (প্রার্থনা) করো। জাহেদাকে ডাকো । ও আসবে। সুখবাস চেষ্টা করেও স্বপ্নে জাহেদাকে দেখতে পেত না । নামাজে মোনাজাত করেও নয়। সুখবাসের ঘুম আসত না । এক সময় সে মদিনার সাথে মিলিত হতো। মদিনার পুষ্ট সবল দেহ জাহেদাকে আড়াল ক’রে দিচ্ছিল । সুখবাস ভোরের নামাজ পড়ে প্রতিদিন অন্ধকার ঝাপসায় মক্তবে আসত। So