পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করছেন গিয়াসজী ! গিয়াসজী উত্তর দিলেন না । অনুগামী তিন ছাত্রকে বললেন--মিজান, মকবুল, ঈদ্রিশ ! তোমরাও পড়ে । আল্লার কালাম পড়ো ! তিন ছাত্র সাথে সাথে প্রস্ফুটিত হয়ে গেল। দিদার আর্তনাদ ক’রে Wলেন- সর্বনাশ ! করেন কী ? আমার যে ভয় করছে ! সইফুল্লা সাহেব বলেছিলেন - দেখুন, আমার চাকবির কথাটা ভাবুন, মানে আমার দাযিত্ব • কোনো কথাই শোনেন না গিয়াসজী । আরো জোরে খোদার কালাম ধ্বনিত ক’লে চলেন ! এ এক অদ্ভূত অভিযাত্রা তাঁব । যেন অলৌকিক অপার্থিব মোহগন্ধহীন সুখকর দেশান্তর । জীবনের সব অপমানের অমৃতময় গ্রহণে তিক্ততার প্রত্যাখ্যান ; তিনি গুঞ্জবিত মুকুলিত । প্রস্ফুটিত হয়ে নিজেকে গেথে গেথে মহাকাশে খাড ক'রে তুলছেন । নদীর কিনার দিয়ে গাডি চলেছে । জলে প্ৰতিধ্বনিত হয় খোদাবী কণ্ঠস্বর। । ফিরে এসে মানুষকে প্লাবিত করে । দুই ক্রোশের মাথায় দ্বিতীয় ‘তালাক’ ঘোষিত & হঠাৎ দিদার বক্স মকবুলের কানের কাছে গীলা নামিয়ে বলেন-কে রে গাডোয়ান ? সিমার না ? মকবুল থেমে যায় { দাঁড়িয়ে পড়ে । কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যায্য ! যেন সে ভয় পেয়ে গিয়েছে । ঈদ্রিশের কানেও একই বাতা পৌঁছে দেন। দিদার বক্স । ঈদ্রিশাও থেমে পড়ে । ভয় পায় । এইভাবে সিজােনও আমাত। থামায় । পা থামায় । ওদের খেয়াল হয়, সেক্রেটারি কী কথা বলছিলেন ! ওরা আর অগ্রসর হয় না । দিদার ওদের সাথে ক’রে সুখডহরির দিকে চেয়ে থাকেন । তারপর গাঁয়ের দিকে হাঁটতে শুরু করেন । গিয়াসজী তখন গাড়োয়ানকে শুনিয়ে বলেন-গাড়ি দাঁড় করালে কেন ? চলো । দুই তালাক তো হয়ে গেছে। তুমি নিজে কানে শুনলে ! শোনো নি ? সুখবাসকে গিয়ে বলবে, আমি তিন তালাকই দিয়েছি। হ্যাঁ, বলবে । আর মাত্র এক ক্রোশ পথ বাকি । তুমি মদিনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা বাস ধরব । কী গো ছেলে, পারবে না ? চালাও গাড়ি ! গাড়োয়ানের গলায় কেমন কান্না আর আনন্দের মেশানো বিকৃত স্বর। । অবুঝের আদিম আনন্দ যেমন । ভাষাহীন চাপা উল্লাসের আদিমতা । গরুর পিঠে লাঠি ভাঙে সে। গরু জোড়া লাফিয়ে ছুটতে থাকে । আবার গুঞ্জন শুরু হয় । আয়াত গুঞ্জরিত হয় । কিছুদূর এসে ফের গাড়ি থেমে পড়ে । গাড়োয়ান নেমে পড়ে । অন্ধকারে পেছনে চেয়ে দেখে ওরা কোথায় । ওদের চিহ্ন দেখা যায় না । দাঁড়িয়ে থাকে । \98