পাতা:সিমার - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নতজানু হয়ে গ্রহণ করব । না দিলে ফিরে আসব। আমার সাথে কেউ যাবে না। তুমি ভালো থেক। আমি এ চিঠি জেলার বাইরে থেকে লিখছি। এতদূরে এসে মনে পড়ছে, আমরা দুজনই একদিন রাবেয়াকে ভালোবেসেছিলাম। আজও তেমনিই ভালোবাসি। ইতি তোমার হতভাগ্য বন্ধু রাবেয়া বললে, চলে উঠি । বললাম, চলো ! কিন্তু এখান থেকে উঠে কোথায় যাব ? কেনই বা উঠে যাব ? রাবেয়া কেন উঠে যেতে চায় ? হঠাৎ তার কি এমন হলো, যাতে সে উঠে যেতে চাইছে ? হামিদুলের চিঠিটা পিয়ন দিয়েছে। যখন, তার পরই রাবেয়া আমার কলেজে চলে এসেছে, বাড়িতে টিকতে পারেনি । তার ভয় করেছে। আমাকে দেখতে ইচ্ছে করেছে । আমাকে নিয়ে কোথাও পালিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়েছে। ঘুরে ঘুরে বেড়াতে চেয়েছে। এই একটি ক্ষুদ্র চিঠির ক্ষমতা অনেক । শমনের মতো পাওয়ারফুল। কিংবা এ হঠাৎ নতুন হয়ে ওঠা ভালোবাসার মতো শৌখিন । স্বাদু এবং বর্ণময় । এ যেন পুরাতন রাস্তার অস্পষ্ট আলো-অন্ধকারে ডেকে ওঠা চির-চেনা বন্ধুত্ব । সমস্ত হৃদয়বেগকে এ চিঠি মুহুর্তে স্তব্ধ অনড় লীলায়িত তরঙ্গের মতো চিত্ৰাপিত করে দেয় । সমস্ত স্পধাঁকে রুখে দিয়ে বলে, আমি আসছি । আমি এসে গেছি। অথচ কী আশ্চর্য! আমাদের অতৃপ্ত, ভয়ে-ঠাসা, নম্ৰ-শঙ্কিত, অশুজলে মাখামাখি যেন বা সামান্য দৈব অৰ্পিত ভালোবাসার পায়ে নতজানু হয়ে আছে । ভিখারীর মতো এ চিঠি করুণায় উজ্জ্বল, বিরহ-নিষিক্ত একটি ক্ষুধার্তা ভালোবাসার অশুপাত । এর ক্ষমতা অনেক । অথবা এ তুচ্ছ। ঘাস ফুল । এ কিছু নয় । কোনো কিছুই নয়। ‘চলো ’ বলে উঠতে গিয়ে বাধা পাই । রাবেয়া আবার তার বুকের উষ্ণ আবেগে টান দেয়, আলিঙ্গনে তপ্ত প্রখর হতে চায় । বাধা দিয়ে বলি, না !! লক্ষ্মী মেয়ে ! না ! রাবেয়া আরক্ত ঠোঁটে ঘন নিশ্বাসে অবাধ্যের মতো আমাকে অাঁকড়ে ধরে থাকে। আমি এক রকম জোর করে টেনে তুলি ওকে । টেনে নিয়ে পার হই ব্রিজ । ও যেন এলোমেলো আহ্বাদে আমার পাশে হেঁটে চলতে চলতে কেমন ঢলে গলে পড়তে চায় । এভাবে হাঁটা ঠিক হচ্ছে না, বুঝতে পারি। তাই রিকশা পেতেই উঠে পড়ি রিকশায়। এসে নামি ফুলের দোকানে । ফুল কিনি । রাবেয়াকে তার ইচ্ছে মতো ফুল কিনবার অধিকারে সুখী করি । একটি রঙিন re