পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৷৹

লেখাই সমধিক উল্লেখযোগ্য। ইহারা সকলেই সমসাময়িক দর্শক ও কোন কোন ঐতিহাসিক ব্যাপারের নায়ক।

 এই সকল পুরাতন গ্রন্থাদি বহুবিধ বাগবিতণ্ডায় পরিপূর্ণ। সমস্তগুলি সংগ্রহ করিয়া, মতপার্থক্যের যথাযথ সমালোচনা করিয়া, তদনুসারে সেকালের ইতিহাস সংকলন করা কেবল যে বহুব্যয় ও বহুশ্রমসাধ্য ব্যাপার তাহাই নহে;—যত্ন চেষ্টা এবং অধ্যবসায় থাকিলেও, একেবারে নির্ভুল হইবার সম্ভাবনা নাই। এরূপ অবস্থায়, সিরাজদ্দৌলার ইতিহাস সংকলনের চেষ্টা হয়ত নিতান্তই অনধিকারচর্চ্চা হইল।

 সিরাজদ্দৌলার কলঙ্ককাহিনীতে স্বদেশ বিদেশ সমাচ্ছন্ন হইয়া রহিয়াছে। কলঙ্কের ইতিহাস সর্ব্বজনপরিচিত; কলঙ্কসৃষ্টির ইতিহাস সেরূপ নহে। তাহা সংক্ষেপে বর্ণনা করিতে গিয়া কর্ত্তব্যানুরোধে স্বদেশ বিদেশের অনেক প্রতিভাশালী সাহিত্যসেবকের সুললিত বর্ণনার সমালোচনা করিতে হইয়াছে। সকলস্থলে “সত্যংব্রূয়াৎ, প্রিয়ংব্রূয়াৎ, ন ব্রূয়াৎ সত্যমপ্রিয়ং”—এই পুরাতন অনুশাসনবাক্য পালন করিতে পারি নাই। ইতিহাস সত্যের উপরেই প্রতিষ্ঠিত; সুতরাং ইতিহাসের মর্য্যাদারক্ষার জন্য অনেক স্থলে ব্যথিত হৃদয়ে অনেক অপ্রিয় সত্য উদ্ঘাটন করিতে হইয়াছে।

 সিরাজকলঙ্ক প্রধানতঃ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত,—প্রাচীন এবং আধুনিক। এই সকল কলঙ্ক আবার দুই শ্রেণীতে বিভক্ত,—লিখিত এবং অলিখিত। প্রাচীন লিখিত কলঙ্কসংখ্যা অধিক নহে; আধুনিক লিখিত কলঙ্ক সংখ্যাই অধিক। কিন্তু অলিখিত কলঙ্কের নিকট লিখিত কলঙ্ক পরাজয় স্বীকার করিয়াছে। লিখিত কলঙ্কগুলি ইতিহাসে সীমাবদ্ধ; অলিখিত কলঙ্কের আর সীমা নাই;—তাহা এখনও থাকিয়া থাকিয়া