পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হোসেন কুলী।
৯৫

বেড়াইত। টাকা থাকিলে সপ্তাহের মধ্যে যে কেহ সহস্র সহস্র সেন সংগ্রহ করিতে সক্ষম হইত। ইহারা কোন নির্দ্দিষ্ট সেনানিবাসে বাস করিত না। আবশ্যক হইলে যে কেহ অর্থবিনিময়ে এই সকল শোণিতলোলুপ সৈনিকদলের সাহায্য ক্রয় করিতে সক্ষম হইত। নবাব বা বাদশাহদিগের জীবনকাল যতই শেষ হইয়া আসিত, এই শ্রেণীর লুণ্ঠনলোলুপ সৈনিকগণ ততই রাজধানীর আশে পাশে সমবেত হইতে আরম্ভ করিত। ইহাদের সাহায্যে, ভারতবর্ষের অনেক বাদসাহ, প্রকৃত উত্তরাধিকারীকে পথের ফকির করিয়া, বাহুবলে দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন। সিরাজদ্দৌলা তাহা জানিতেন, আর জানিতেন বলিয়াই আপন দৈন্যদশা এবং নওয়াজেসের অর্থবলের তুলনা করিয়া শিহরিয়া উঠিতেন। হাতে টাকা থাকিলে সৈন্যদল সংগ্রহ করা তাঁহার পক্ষেও সহজ কথা; কিন্তু টাকা কোথায়? সিরাজদ্দৌলা টাকা টাকা করিয়া ব্যাকুল হইয়া উঠিলেন, ইহাই তাঁহার অর্থপিপাসার মূল।

 সিরাজ অর্থপিপাসায় ব্যাকুল হইয়া চারিদিকে শ্যেনদৃষ্টিতে নয়নসঞ্চালন করিতেছেন,এমন সময়ে সহসা এক নূতন বিপদ উপস্থিত হইল। নওয়াজেসের হিতৈষীদিগের মধ্যে রাজবল্লভ এবং হোসেন কুলি খাঁর নাম বাঙ্গালার ইতিহাসে পরিচিত হইয়াছে; তাঁহারা উভয়েই বিদ্যাবুদ্ধি এবং কুটিল-নীতির জন্য সমধিক শক্তিশালী হইয়া উঠিয়াছিলেন। হোসেন কুলীর হস্তে নওয়াজেসের ধনভাণ্ডার ন্যস্ত ছিল। তদুপলক্ষে নওয়াজেসের সংসারে হোসেন কুলীর যথেষ্ট প্রভুত্ব ছিল। কিন্তু কর্ম্মদোষে হোসেন কুলীখাঁ সেই প্রভুত্বের সদ্ব্যবহার করিতে পারেন নাই। তাঁহার নামের সঙ্গে নওয়াজেসের বেগম ঘসেটির নাম সংযুক্ত করিয়া দাসদাসীগণ অনেক কথা কাণাকাণি করিত; সে কথা