পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২০
সিরাজদ্দৌল্লা।

“ইংরাজদিগকে দমন করিতে পারিলে, অন্যান্য ইউরোপীয় বণিকেরা আর মাথা তুলিয়া উৎপাত করিতে সাহস পাইবে না। ইংরাজদিগকে কিছুতেই দুর্গনির্মাণ বা সেনাসংগ্রহ করিবার প্রশ্রয় দিও না;— যদি দাও, এ দেশ আর তোমার থাকিবে না।”[১]

 আমরা যে সময়ের কথা বলিতেছি, তৎকালে কাশিমবাজারের ইংরাজ-কুঠীতে ডাক্তার ফোর্থ নামে একজন ডাক্তার-সাহেব ছিলেন। তিনি কেবল ঔষধপত্র লইয়াই বসিয়া থাকিতেন না; আবশ্যকমত কোম্পানীর সকল প্রকার কার্য্যই সম্পাদন করিতেন। ইহাই সেকালের রীতি হইয়া দাঁড়াইয়াছিল;—আজ যিনি মাল গুদামে বসিয়া দাদনের খাতাপত্র লিখিতেছেন, কাল আবার আবশ্যক উপস্থিত হইলে, তাঁহাকেই, কালি কলম ছাড়িয়া, বন্দুকের উপর সঙ্গীণ চড়াইয়া, কোম্পানীর বাণিজ্য রক্ষার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রেও অগ্রসর হইতে হইত। এই প্রথার বশবর্তী হইয়া, ডাক্তার-সাহেব মধ্যে মধ্যে ইংরাজ পানধি সাজিয়া নবাবদরবারেও যাতায়াত করিতেন। আলিবর্দ্দী যখন নিতান্তই শয্যাশায়ী হইয়া পড়িলেন, তখন নবাবদরবারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করিবার জন্য ডাক্তার ফোর্থকে প্রায় প্রত্যহই নবাবের নিকট গমন করিতে হইত। ইহাই তখন তাঁহার মুখ্য কর্ম্ম হইয়া উঠিয়াছিল। তিনি

  1. Ive's journal, আলীবর্দ্দীর অন্তিম উপদেশ ইংরাজদিগের গ্রন্থে স্বীকৃত হইলেও, নবাবী আমলের বাঙ্গালার ইতিহাসে উহ অবিশ্বাস্য বলিয়া কথিত হইয়াছে। ইঙ্গিতে ইহাও বলা হইয়াছে যে—“আলীবর্দ্দীর কথিত উপদেশকে গ্রন্থি স্বরূপ ধরিয়া সিরাজ চরিত্র সমালোচনা করা অন্যায় হইয়াছে।” বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় মীরজাফরকে বাঁচাইবার জন্য সিরাজদ্দৌলাকে আলালের ঘরের দুলাল সাজাইতে গিয়া আলীবর্দ্দীর উপদেশ অবিশ্বাস করিতে বাধ্য;—যাহাদের সেরুপ বাধ্য রাধকতা নাই, তাহারা অবিশ্বাস করিবেন কেন?