দীঘিই সাধারণের নিকট “পার্ক” বলিয়া পরিচিত ছিল; কিন্তু তাহার পূতিগন্ধও বহুদূর পর্যন্ত পথিকদিগকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিত।[১]
এখন যেখানে শ্বেতাঙ্গ নর-শার্দূলগণ সৌধ-ধবল চৌরঙ্গী অঞ্চলে সশরীরে স্বর্গসুখ উপভোগ করেন, সেকালে সেখানে কেবল বনশালনিনাদ-মুখরিত শ্যামল বন-বিটপিরাজি বিরাজ করিত। ১৭৫১ খৃষ্টাব্দে ইষ্টক প্রস্তুতের জন্য তাহার কিয়দংশ নির্ম্মূল হইয়াছিল। কিন্তু তথাপি সে নিবিড় বন একেবারে উৎসাদিত হয় নাই;—নগরের মধ্যেও অনেক স্থানেই তরুগুল্মলতা স্বচ্ছন্দবনজাত স্বাভাবিক শোভা বিকাশ করিয়া সগৌরবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিস্তার করিত।[২] লোকে কেবল বাণিজ্য লোভে অথবা বর্গীর ভয়েই এরূপ স্থানে বাস করিতে সম্মত হইত। কিন্তু আভ্যন্তরিক অবস্থা, যতই শশাচনীয় হউক, ভাগীরথী-তীর-সমাশ্রিত সুগঠিত অট্টালিকাসমুহের বাহাড়ম্বরে কলিকাতা বহুজনাকীর্ণ মহানগরী বলিয়াই প্রতিভাত হইত।
এই নবজাত মহানগরে ইংরাজের প্রবল প্রতাপ ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠালাভ করিতেছিল। তাঁহারা নবাবের রাজ্যে বাস করিয়াও নিজ শহর কলিকাতার মধ্যে স্বাধীনতা-প্রিয়তার পরিচয় দিতে ক্রটি করিতেন না। তাহাদের অনুমতিক্রমে পর্তুগীজ, আরমানী, মোগল এবং হিন্দু বণিকেরাও কলিকাতায় বাসস্থান নির্মাণ করিয়া বাণিজ্যব্যাপারে প্রভূত অর্থোপার্জন করিতেন।