পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪২
সিরাজদ্দৌলা।

 এই মোগল রাজধানীতে কোনরূপ রাজদুর্গ ছিল না; কয়েকটি নগর-তোরণ ভিন্ন পুরীরক্ষার জন্য প্রাচীর পর্যন্তও দেখিতে পাওয়া যাইত না। মোগলের প্রবল প্রতাপ চূর্ণ করিয়া কেহ যে সহসা বাহুবলে রাজধানী অধিকার করিতে সাহস পাইবে, এমন কথা স্বপ্নেও কল্পনায় স্থান পাইত না।

 রাজধানীর এইরূপ অরক্ষিত অবস্থার সন্ধান পাইয়া লুণ্ঠনলোলুপ মহারাষ্ট্রসেনা যখন সত্যসত্যই নগর আক্রমণ পূর্ব্বক জগৎশেঠের ভাণ্ডার পর্যন্ত লুঠিয়া লইয়া গেল, তখন কাহারো কাহারো কথঞ্চিৎ চেতনা হইয়াছিল। কিন্তু আলিবর্দ্দী সে দিকে লক্ষ্য না করিয়া, স্বস্ব ধনপ্রাণ- রক্ষার জন্য প্রজাসাধারণকে স্বাধীনতা প্রদান করিয়াই নিরস্ত হইয়া- ছিলেন; রাজধানীরক্ষার জন্য কোনরূপ আয়োজন আরব্ধ হয় নাই। আর কেহ কিছু করুক না করুক, সুচতুর বৃটিশ বণিক সেই সুযোগে কাশিমবাজারের বাণিজ্যাগারের চারি দিকে প্রাচীর গাঁথিয়া, কামান পাতিয়া,সিংহদ্বার সাজাইয়া, একটি ছোট খাট রকমের দুর্গরচনা করিয়া- ছিলেন। কালক্রমে তাহা ধূলিপরিণত হইয়াছে। কেবল স্থান-নির্দেশের জন্য কতকগুলি স্বচ্ছন্দবনজাত তীরতরু সগৌরবে আকাশে অঙ্গ বিস্তার করিয়া দৃঢ়পদে দণ্ডায়মান রহিয়াছে; ভাগীরথী-স্রোত সসম্রমে তাহার নিকট হইতে বহুদূরে প্রস্থান করিয়া,ধ্বংসাবশিষ্ট ইংরাজদুর্গের পরিত্যক্ত ভিত্তিভূমি আরও ভীষণতর করিয়া তুলিয়াছে।[১]

  1. There is a rough plan of the Fort in Tieffenthaler, 1. 453. plate_XXXl. শ্রীযুক্ত কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ‘স্বচ্ছন্দ বনজাত তীর তরু উদামতরুর বিক্রমে নিরাকৃত হইয়াছে। কিন্তু এই সকল পুরাতন বৃক্ষ সেদিন পর্য্যন্তও বর্তমান ছিল।’