পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৮
সিরাজদ্দৌলা।

বার অবসর পাইবেন না। সিরাজদ্দৌলা যেরূপ উত্ত্যক্ত হইয়া ইংরাজের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হইয়াছিলেন, তাহা অপেক্ষা কত তুচ্ছ কথা লইয়া গায়ে পড়িয়া ইংরাজ-রাজ এই জ্ঞানোজ্জল যুক্তিতর্ক-পরিচালিত ঊনবিংশ শতাব্দীতেও কত দেশে কত লোমহর্ষণ ভীষণ দাবানল প্রজ্বলিত করিতে বাধ্য হইতেছেন। রাজশক্তি চিরদিনই প্রভুশক্তি; শত্রু হউক আর মিত্র হউক, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রবল পরাক্রান্ত স্বাধীন নরপতি হউক, আর পদাশ্রিত দীনহীন দুর্ব্বল প্রজাই হউক, —যে কেহ সমুন্নত রাজশক্তির প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করিবে,তাহাকেই পদানত করিবার জন্য রাজরোষ উৎক্ষিপ্ত হইয়া উঠিবে। ইহাই সকল দেশের রাজধর্ম্ম। সিরাজদ্দৌলা সেই ধর্ম্মের মর্য্যাদারক্ষার্থ পদাশ্রিত ইংরাজ বণিকের ধৃষ্টতার সমুচিত প্রতিফল প্রদান জন্য তাঁহাদিগের কাশিমবাজারের ক্ষুদ্র দুর্গ অবরোধ করিবার আদেশ প্রদান করিলেন।

 কি কি ঘটনাপরম্পরায় নিতান্ত উৎপীড়িত হইয়া সিরাজদ্দৌলা কাশিমবাজার অবরোধ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন, অনেকে অনেক কারণে তাহার মূলানুসন্ধান করা আবশ্যক বলিয়া বিবেচনা করেন নাই। সুতরাং তাঁহাদিগের ইতিহাসে ‘কাশিমবাজার অবরোধ’ ও যে সিরাজ দ্দৌলার কলঙ্কসংখ্যা বৃদ্ধি করিয়াছে, তাহাতে কিছুমাত্র বিস্ময়ের কারণ নাই। কিন্তু, সিরাজদ্দৌলা নিতান্ত উত্ত্যক্ত হইয়াও কিরূপ সুকৌশল পূর্ণ সহিষ্ণুতা প্রকাশপূর্ব্বক বিনা রক্তপাতে কাশিমবাজার হস্তগত করিয়াছিলেন, তাহার আলোচনা করিলেই সত্যনির্ণয় করিতে আর ক্লেশ স্বীকার করিতে হইবে না।

  ১৭৫৬ খৃষ্টাব্দের ২৪শে মে সোমবার অপরাহ্ণে উমরবেগ জমাদার তিন সহস্র অশ্বারোহী লইয়া কাশিমবাজারে উপনীত হইয়া নীরবে