পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৮
সিরাজদ্দৌলা।

পারে না। নানাদিক হইতে নানা বিরুদ্ধ-শক্তি যেরূপভাবে কেন্দ্রীভূত হইয়া আসিতেছিল,ইংরাজদিগের উদ্ধত ব্যবহার তাহারই বাক্যস্ফূর্ত্তিমাত্র, সুতরাং বাহুবলে আত্মরক্ষা করিয়া রাজশক্তি সংস্থাপনের চেষ্টা না করিলেও যে সিরাজ-জীবন দীর্ঘস্থায়ী হইতে পারিত, তাহারই বা নিশ্চয়তা কি?

 সিরাজদ্দৌলা যে নিতান্ত নিরুপায় হইয়াই বাহুবলের আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন, ইংরাজেরা সে কথা স্বীকার করিতে প্রস্তুত নহেন। তাঁহারা আদ্যোপান্ত সকল কথা আলোচনা না করিয়াই লিখিয়া গিয়াছেন যে, “কাশিমবাজার হস্তগত করিয়া, ইংরেজদিগের কাকুতি মিনতি শ্রবণ করিয়া, নবাবের বিশ্বাস জন্মিয়াছিল যে, ইংরাজ তাঁহার ভয়ে এতই জড়সড় হইয়াছেন যে, এ সময়ে বাহুবলে কলিকাতা আক্রমণ করিতে পারিলে সহজেই কার্য্যসিদ্ধি হইবে; ইংরাজদিগকে পরাজয় করিয়া যথেষ্ট অর্থ-লুণ্ঠনের সুবিধা হইবে; কেবল সেই জন্যই সিরাজদ্দৌলা কলিকাতা আক্রমণ করিতে ধাবিত হইয়াছিলেন।[১]


  1. The Subadar had a whish for a triumph, which he thought might be easily obtained; and he was greedy of riches, with which, in the imagination of the natives, Calcutta was filled.— Mill's History of British India, vol. iii. 147. মহম্মদ রেজাখাঁর দেওয়ানী আমলে সঙ্কলিত মজঃফর নামার উপর নির্ভর করিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ও এই মত অবলম্বন করিছেন! নবাবী আমলের বাঙ্গালীর ইতিহাসে (২১৩ পৃষ্ঠায়) লিখিত হইয়াছে —“ইহাতে ইংরাজগণের উপর আক্রোশবৃদ্ধির ন্যায়সঙ্গত কোন কারণ দেখা যায় না।* * *সমস্ত বিচার করিয়া দেখিলে গোলাম হোসেনের মতেই বলিতে হয়, সিরাজের মস্তিষ্ক অহমিকার ধূমেই পূর্ণ ছিল।” ২৩৫ পৃষ্ঠায় এইমত পরিত্যাগ করিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় লিখিয়াছেন,—“ভবিষ্যতে ঐতিহাসিকগণ যাহাই বলুন, একথা অবশ্য স্বীকার্য্য যে, ইংরাজকর্ম্মচারিগণের হঠকারিতায় ক্রমাগত উত্যক্ত হইয়াই সিরাজদ্দৌলা ইংরেজ উৎখাতে বদ্ধ পরিকর হন; তরে কলিকাতা পর্য্যন্ত গিয়া ইংরেজ পীড়ন কিঞ্চিৎ অতিরিক্ত হইয়া পড়িয়াছিল।” নবাবী আমলে বাঙ্গালার ইতিহাসের সর্ব্বত্র মত সামঞ্জস্য রক্ষিত হয় নাই।