পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৪
সিরাজদ্দৌলা।

 সিরাজদ্দৌলা যে এইরূপ সুকৌশলে রাজধানীর আপদাশঙ্কা নিবারণ করিয়া, মহাসমারোহে নিশ্চিন্তহৃদয়ে সসৈন্যে কলিকাতার দিকে অগ্রসর হইতে সক্ষম হইবেন, ইংরাজদিগের তত দূর ধারণা ছিল না। ৭ই জুন প্রাতঃকালে এই সংবাদ কলিকাতার ইংরাজমহলে সবিশেষ হুলস্থূল বাধাইয়া দিল। আর সময় নাই, যাহা কিছু করিবার এখনই তাহা সম্পন্ন করা আবশ্যক; কিন্তু রণকুশল সেনাপতির অভাবে কোন কার্য্যেরই শৃঙ্খলা হইতে পারিল না। তথাপি যত দূর সম্ভব, ইংরাজরা প্রাণপণে আত্মরক্ষার আয়োজন করিতে আরম্ভ করিলেন। বাগ্‌বাজারে পেরিং নামক যে নূতন দুর্গ প্রাকার নির্ম্মিত হইয়াছিল, সেখানে রাশি রাশি আগ্নেয়াস্ত্র সজ্জীভূত হইল; জলপথে নগরাক্রমণ করিবার আশঙ্কা আছে। তজ্জন্য বাগ্‌বাজারের খালের ধারে ভাগীরথীগর্ভে যুদ্ধজাহাজ সুরক্ষিত হইল; পোনের শত ঠিকা সিপাহী নিযুক্ত করিয়া মহারাষ্ট্র খাতের ধারে ধারে স্থানে স্থানে সমাবেশ করা হইল; দুর্গপ্রাচীরের যথাসাধ্য সংস্কারকার্য্য সুসম্পন্ন করিয়া তন্মধ্যে অন্নপান সঞ্চয় করা হইল; মাদ্রাজে সাহায্যভিক্ষার জন্য পত্র লেখা হইল; এবং নগররক্ষার জন্য ওলন্দাজ ও ফরাসীদিগের সহায়তালাভের প্রার্থনায় তাঁহাদের নিকট দুত প্রেরিত হইল।

 ওলন্দাজেরা কর্ত্তব্যনিষ্ঠ সরলস্বভাব নিরীহ বণিক; তাঁহারা গায়ে পড়িয়া নবাবের সঙ্গে কলহসৃষ্টি করিতে সম্মত হইলেন না। ফরাসীরা চিরদিনই কৌতুকপ্রিয়। তাঁহারা বলিয়া পাঠাইলেন যে, বৃটিশসিংহ যদি প্রাণভয়ে নিতান্তই জড়সড় হইয়া থাকেন, তবে তিনি অবলীলাক্রমে চন্দননগরের ফরাসীদুর্গে পলায়ন করিতে পারেন; সেখানে আশ্রয়গ্রহণ করিলে আশ্রিতের প্রাণরক্ষার জন্য