পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হলওয়েলের রচনা।
১৮৭

মুসলমানদিগের ইতিহাসে ইহার উল্লেখ নাই;—ইংরাজদিগের ইতিহাসে ইহারই নাম লোমহর্ষণ “অন্ধকুপ-হত্যা”।

 অন্ধকূপ-হত্যার সর্ব্বপ্রধান সংবাদদাতা হলওয়েল সাহেব লিখিয়া গিয়াছেন যে,—“লোকে বাঙ্গালার ইতিহাস পড়িয়া, কেবল এইমাত্র জানিয়া রাখিবে যে, ১৭৫৬ খৃষ্টাব্দের ২০শে জুনের নিদাঘ-সন্তপ্ত নিশীথসময়ে ১৪৬ জন বন্দীর মধ্যে ১২৩ জন হতভাগা অন্ধকূপে জীবন বিসর্জ্জন করিতে বাধ্য হইয়াছিল। কেমন করিয়া এই সর্বনাশ সংঘটিত হইল, তাহার যথাযথ বর্ণনা করিতে পারেন, এমন অল্প লোকেই প্রাণ লইয়া ফিরিয়া আসিয়াছেন!—যাঁহারা যত্ন করিলে কিছু কিঞ্চিৎ, লিখিয়া যাইতে পারিতেন, তাঁহারা কেহই সে শোচনীয় কাহিনী বর্ণনা করিবার চেষ্টা করেন নাই। লিখিব লিখিব করিয়া আমিও কতবার দৃঢ়-সংকল্প হইয়াছি; কিন্তু কতবার সে উদ্যম শিথিল হইয়া পড়িয়াছে! লিখিতে বসিলেই প্রাণের মধ্যে সেই নিদারুণ মর্ম্ম-যাতনার চিরপ্রদীপ্ত শোচনীয় স্মৃতি এরূপ হৃদয়বেদনা জাগরিত করিয়া দেয় যে, সেই লোমহর্ষণ দৃশ্যপট অঙ্কন করিবার জন্য যথোপযুক্ত ভাষা খুঁজিয়া পাইনা! পৃথিবীর ইতিহাসে এমন মর্ম্ম-বেদনার দৃষ্টান্ত আর নাই।[১] সেই মর্ম্ম-বেদনায় শরীর ও মন যেরূপ অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছিল, তাহা আবার কিয়ৎপরিমাণে প্রকৃতিস্থ হইয়াছে। সুতরাং অন্ধকুপহত্যার লোমহর্ষণ অত্যাচারকাহিনী বিস্মৃতি-গর্ভে বিসর্জ্জন না করিয়া, তাহা যথাসাধ্য লিপিবদ্ধ করিবার

  1. আছে। তাহার নায়ক ইংরাজ, সংযোগল স্কটলণ্ড; Massacre of Glenco নামে তাহা ইংলণ্ডের গৌরবমণ্ডিত ইতিহাস-পৃষ্ঠা কলঙ্কিত করিয়া রাখিয়াছে।