পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৪
সিরাজদ্দৌলা।

 অন্ধকূপ হত্যাকাহিনী কবে কাহার কৃপায় জনসমাজে প্রথম প্রচারিত হইয়াছিল,—সে ইতিহাসও সবিশেষ রহস্য-পরিপূর্ণ! হলওয়েল সাহেব তাহার প্রথম প্রচারক। ১৭৫৭ খৃষ্টাব্দের ২৮শে ফেব্রুয়ারী তারিখে হলওয়েল তাঁহার প্রিয়বন্ধু উইলিয়ম ডেভিসকে যে পত্র লিখেন, তাহাতেই অন্ধকূপ হত্যার প্রথম এবং শেষ পরিচয়! হলওয়েল ১৭৫৭ খৃষ্টাব্দে ‘সাইরেণ’[১] নামক পোতারোহণে বিলাতযাত্রাকালে অনন্যকর্ম্মা হইয়া এই বিষাদকাহিনী রচনা করিয়াছিলেন; কিন্তু পলাশির যুদ্ধের পূর্ব্বে ইহা যে জনসমাজে পরিচিত হইয়াছিল, সেরূপ প্রমাণ প্রাপ্ত হওয়া যায় না। পলাশির যুদ্ধাবসানে ভারত প্রবাসী ইংরাজ-বণিকের অপকীর্ত্তির উল্লেখ করিয়া ইংলণ্ডের নরনারী যখন তুমুল কোলাহল উপস্থিত করিল, সেই সময়ে (তৎপূর্ব্বে নহে!) এই পত্রখানি জনসাধারণের নিকট প্রথম প্রকাশিত হইল! ইংলণ্ডের নরনারী নরপিশাচ সিরাজদ্দৌলার নামে শিহরিয়া উঠিল;—ইংরাজের কুকীর্ত্তির কথা কোথায় বিস্মৃতিগর্ভে বিলীন হইয়া গেল;—সিরাজদ্দৌলার কলঙ্ককাহিনীতে সভ্যজগৎ ধ্বনিত হইয়া উঠিল![২]

  1. Early Records of British India.
  2. ১৭৫৬ খৃষ্টাব্দের নবেম্বর মাসে ফলতার পত্রে হলওয়েল কি লিখিয়াছিলেন বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় তাহা উদ্ধৃত করিয়াও লিখিয়াছেন যে, ডেভিসের পত্রকে অন্ধকূপ হত্যার প্রথম বিবরণ বলা ভুল হইয়াছে। ১৪৬ জন বন্দীর মধ্যে ১২৩ জন নিহত হওয়ার কথা ডেভিসের নিকট লিখিত পত্রেই প্রথম প্রচারিত হয়। তৎপূর্ব্বে ফলতাপত্রে কেবল অবরুদ্ধ হইয়া অকথ্য কষ্ট পাওয়ার কথা ছিল, কাহারও নিহত হওয়ার কথা ছিল না; ১৪৬ জন অবরুদ্ধ হওয়ারও কোন উল্লেখ ছিল না, যথা:— I was with the rest of my fellow sufferers about eight at night crammed into the Black Hole prison and past a night of horrors, I will not attempt to describe as they can all descriptions."—এই ফলতার পত্রও কিন্তু পলাশীযুদ্ধের উত্তরকালে জনসমাজে প্রকাশিত হয়।