পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৮
সিরাজদ্দৌলা।

পাঠাইয়া দিয়া, দ্বিতীয় সংবাদের অপেক্ষায় কথঞ্চিৎ নিশ্চিন্তমনেই কালযাপন করিতে লাগিলেন।

 ৫ই আগষ্ট তারিখে রণপলায়িত ম্যানিংহাম সাহেব মাদ্রাজের বন্দরে উপনীত হইলেন। তাঁহার মুখে মাদ্রাজের ইংরাজ দরবার কলিকাতার কথা, সিরাজদ্দৌলার কথা ইংরাজের সর্বনাশের কথা,—এক সঙ্গে সকল কথাই শুনিতে পাইলেন! সে সংবাদে মাথায় বজ্রাঘাত পড়িল। সকলে একেবারে হতবুদ্ধি হইয়া পড়িলেন। সকলেই একবাক্যে বলিতে লাগিলেন;—“হায়! হায়! কি হইল? এতদিনের এত আশা, সকল আশাই এক ফুৎকারে নির্মূল হইয়া গেল!”[১]

 শোকের প্রথম উচ্ছাস চলিয়া গেল। তখন তোক ডাকাইয়া, সভা বসাইয়া, যিনি যেখানে ছিলেন, সকলে মিলিয়া মন্ত্রণা আরম্ভ করিলেন। কেহ কেহ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ন্যায় প্রবল বিক্রমে গর্জন করিয়া উঠিলেন; কেহ কেহ প্রতিহিংসাসাধনের জন্য বীরপ্রতিজ্ঞা অবলম্বন করিবার উত্তেজনা করিতে লাগিলেন;কিন্তু তখন ইংরাজেরা যেরূপ ক্ষীণবল, ফরাসি-সমর-শঙ্কায় নিরন্তর চিন্তাক্লিষ্ট, তাহাতে সহসা কিংকর্তব্য স্থির হইয়া উঠিল না।

 এদিকে মেজর সাহেব ভাগীরথী-মুখে প্রবেশ করিয়াই ফলতার বন্দরে আসিয়া পলায়িত ইংরাজ-জাহাজের সন্ধান পাইলেন। তিনি আর ২৪০ জন গোরা লইয়া একাকী কি করিবেন? সকলকে যথাশক্তি আশা ভরসায় উৎসাহিত করিয়া, আত্মরক্ষার জন্য ফলতার বন্দরেই

  1. On the 5th of August news arrived of the fall of Calcutta, which scarcely created more horror and resentment than consternation and perplexity.—Orme, vol. II.