পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪০
সিরাজদ্দৌলা।

 ভারতভাগ্যবিধাতা মহাবীর ক্লাইব এবং ওয়াট্‌সন্‌ পাঁচখানি রণপোত লইয়া ১৬ই অক্টোবর মাদ্রাজের উপকূল ছাড়িয়া সসৈন্যে যুদ্ধযাত্রা করিলেন। কোম্পানী বাহাদুরের পাঁচখানি জলযান মালপত্র বহিয়া চলিল। ৯০০ গোরাপল্টনের সঙ্গে ১৫০০ কালা সিপাহী সগর্ব্বে বঙ্গোপসাগর বিকম্পিত করিয়া বৃটীশের রণবাদ্যনিনাদে তালে তালে পা ফেলিতে ফেলিতে জাহাজে পদার্পণ করিল। জাহাজ কলিকাতাভিমুখে অগ্রসর হইতে লাগিল;—যতদুর দৃষ্টি চলিল, বেলাভূমিতে দাঁড়াইয়া ইংরাজ নরনারী রুমাল উড়াইয়া উৎসাহ বর্দ্ধন করিতে ত্রুটি করিলেন না।

 একজন বাঙ্গালী-কবি শ্রুতিমধুর সংস্কৃত কবিতায় নব্যভারতের ইতিহাস সঙ্কলন করিয়া গিয়াছেন। তিনি কবিতা-রস-মাধুর্য্যের প্রাখর্য্য রক্ষার জন্য লিখিয়া গিয়াছেন যে,—“অনুকূলোহভবদ্বায়ুঃ প্রয়াণে ক্লাইবস্য হি।”[১] কিন্তু প্রভঞ্জন অনুকূল হইতে পারিলেন না; বায়ুবেগে জাহাজগুলি ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িতে লাগিল। আড্‌মিরাল পোকক ২৫০ গোরা লইয়া ‘কম্বরল্যাণ্ড’ নামক সুবৃহৎ জাহাজে আরোহণ করিয়াছিলেন; এবং ‘মার্‌লবরা’ নামক আর এক খানি কোম্পানীর জাহাজে অধিকাংশ গুলিগোলা পুঞ্জীকৃত হইয়াছিল;—এই দুইখানি বিশেষ প্রয়োজনীয় জাহাজ যে কোথায় উড়াইয়া লইয়া গেল, তাহার আর সন্ধান মিলিল না! অবশিষ্ট জাহাজ গুলি অনেক ঝঞ্ঝাবাত সহ্য করিয়া অবশেষে বলেশ্বরের বন্দরের নিকট দিয়া ধীরে ধীরে কলিকাতাভিমুখে অগ্রসর হইতে লাগিল।

  1. লঘুভারতম।