পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শওকতের সেনা সমাবেশ।
২৪৭

 তথাপি শওকতজঙ্গের প্রবীণ সেনাপতিগণ তাঁহার পক্ষে অনুকুল স্থানেই যুদ্ধভূমি নির্দ্দেশ করিয়া দিয়াছিলেন। অল্প সেনা লইয়া সিরাজদ্দৌলার সেনাতরঙ্গের সম্মুখীন হইবার পক্ষে সেরূপ যুদ্ধভূমি সহজে প্রাপ্ত হওয়া যায় না। সম্মুখে বহুক্রোশবিস্তৃত জলাভূমি, তাহার উপর দিয়া শত্রদলের গোলন্দাজ বা অশ্বারোহীদিগের অগ্রসর হইবার সম্ভাবনা নাই;—সেই জলাভূমি উত্তীর্ণ হইয়া শওকতজঙ্গকে আক্রমণ করিবার উপযোগী একটিমাত্র সঙ্কীর্ণ পথ, তাহার মুখে অল্প কয়েকশত সেনা সমাবেশ করিলেই শত্রুসেনা ব্যূহভেদ করিতে পারিবে না। এমন অনুকূল স্থানে শিবির-সন্নিবেশ করিয়াও শওকতজঙ্গ বুদ্ধির দোষে ব্যূহ রচনা করিতে পারিলেন না। তিনি এই বয়সে এমন একশত যুদ্ধে সেনা-সমাবেশ করিয়াছেন,—সুতরাং তাঁহার কথার প্রতিবাদ করিবে কে? তিনি দুই দুই ক্রোশ ব্যবধানে এক এক সেনাপতির পটমণ্ডপ নির্দ্দেশ করিয়া দিলেন।

 শওকতজঙ্গ যখন মহাসমারোহে যুদ্ধক্ষেত্রে পদার্পণ করিলেন, তখন মোহনলালের সেনাদলের সঙ্গে মীরজাফরের সেনাদল মিলিত হইয়া মার মার শব্দে সম্মুখের দিকে অগ্রসর হইতেছে। কিন্তু কেহই তাহাদের গতিরোধ করিবার চেষ্টা করিতেছে না। তাহারা ক্রমে জলাভূমির সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল। সেখানে দাঁড়াইয়া মোহনলালের সেনাদল গোলাবর্ষণ আরম্ভ করিল; কিন্তু তাহাদের অধিকাংশ গোলাই অর্দ্ধপথে পঙ্কসলিলে নিমজ্জিত হইতে লাগিল। যে দুই একটি গোলা ক্কচিৎ শওকতজঙ্গের সেনানিবাসে পতিত হইতে লাগিল, তাহাতেই তাঁহার সেনাদল ছত্রভঙ্গ হইয়া পড়িল। কি করি বেন কিছুই স্থির করিতে না পারিয়া শওকতজঙ্গ বাহাদুর হতবুদ্ধি