পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হিন্দু শ্যাম সুন্দর।
২৪৯

যুদ্ধব্যবসায়ে সম্পূর্ণ অশিক্ষিত।[১] শত্রুসেনার আগমনসংবাদে তিনি লেখনী ত্যাগ করিয়া গোলন্দাজদলের সেনাপতি হইয়াছিলেন। অশিক্ষিত শ্যামসুন্দর এরূপ বীরপ্রতাপে অনলবর্ষণ করিতে লাগিলেন যে, রণপণ্ডিত মোহনলাল স্তম্ভিত হইয়া অর্দ্ধপথে অশ্বরশ্মি সুসংযত করিতে বাধ্য হইলেন। শ্যামসুন্দরের কামান ভীম কলরবে ঘন ঘন অনলবর্ষণ করিয়া মোহনলালের সেনাপ্রবাহ আলোড়িত করিয়া তুলিল।

 শ্যামসুন্দরের বীরপ্রতাপে শওকতজঙ্গ এতই উত্তেজিত হইলেন যে, তিনি আর অগ্র পশ্চাৎ বিচার না করিয়া অশ্বসেনাকেও অগ্রসর হইবার আদেশ প্রচার করিলেন। বিচক্ষণ অশ্ব-সেনানায়কগণ নবাবের ভ্রমপ্রদর্শন করিয়া বুঝাইতে লাগিলেন যে, অশ্বসেনা অগ্রসর হইলে একজনও প্রত্যাগমন করিবে না; উভয় পক্ষের গোলাবর্ষণে মধ্যপথেই পঞ্চত্বলাভ করিবে। শওকতজঙ্গ তাহা বুঝিতে পারিলেন না। তিনি ক্রোধান্ধ হইয়া বলিয়া উঠিলেন; “হিন্দু শ্যামসুন্দর কেমন বীরপ্রতাপে অগ্রসর হইতেছে,সে মরিল না,—আর তোমরা মুসলমান বীরপুরুষ! তোমরাই মৃত্যুভয়ে জড়সড় হইয়াছ? বুঝিলাম তোমরা সকলেই কাপুরুষ।” সেনাপতিগণ সে ধিক্কার সহ্য করিতে পারিলেন না; পলকমধ্যে দলে দলে অশ্বারোহণ করিয়া সমর-তরঙ্গের মধ্যে সগর্ব্বে অশ্বচালনা করিয়া দিলেন! শওকতজঙ্গ ভাবিলেন যে, আর যুদ্ধক্ষেত্রে

  1. বাঙ্গালী কায়স্থ শ্যামসুন্দর শওকতজঙ্গের পিতার আমল হইতে গোলন্দাজ সৈন্যের বেতনাধ্যক্ষ ছিলেন। বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় বলেন—ইনি “কেবল মসিজীবী ছিলেন না। সেকালের বাঙ্গালী ভদ্রসন্তানের নিকট অসি-মসীর সাপত্ন্য সম্বন্ধ পরিজ্ঞাত ছিল না।” কিন্তু এই যুদ্ধের পূর্ব্বে শ্যামসুন্দরের সেনা চালনা বা সমর শিক্ষার কোন প্রমাণ দেখি নাই।