পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫৪
সিরাজদ্দৌলা।

করিয়া নিরুদ্বেগে নিদ্রা যাওয়া অথবা তাঁহাকে পদচ্যুত করিবার জন্য প্রকাশ্যভাবে বিদ্রোহঘোষণা করা,—মন্ত্রীদলের পক্ষে উভয় পক্ষই তুল্যরূপ সঙ্কটপূর্ণ হইয়া উঠিল। সুতরাং ইংরাজদিগের আগমন-সংবাদে, তাঁহারা সকলেই কথঞ্চিৎ আশ্বস্ত হইয়া যাহাতে ইংরাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ঘনীভূত হয়, তাহার জন্য আয়োজন করিতে লাগিলেন। জগৎশেঠের সঙ্গে ইংরাজদিগের কথাবার্ত্তা, চিঠিপত্র, সকলই চলিতে লাগিল; নবেম্বর মাসের শেষে মেজর কিল্‌প্যাট্রিক তাঁহাকে লিখিয়া পাঠাইলেন যে, “জগৎশেঠই ইংরাজের একমাত্র ভরসাস্থল; সুতরাং ইংরাজেরা যে তাঁহার উপরেই সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করিতেছেন, এ বিষয়ে যেন শেঠজীর মনে কিছুমাত্র সন্দেহ না থাকে।”[১] শেঠজীর আর সন্দেহ রহিল না;তিনি কায়মনোবাক্যে ইংরাজদিগের কল্যাণকামনায় নিযুক্ত হইলেন।

 এদেশে একটি পুরাতন প্রবাদ আছে যে,—

“স্বকার্য্য সাধিতে খল তোষামোদ করে,
তাহে মুগ্ধ হয় যত বোধহীন নরে।”

 শেঠজী সে পুরাতন প্রবাদের মর্য্যাদা রক্ষা করিতে পারিলেন না। যে ইংরাজেরা একবৎসর পূর্ব্বেও কলিকাতায় টাকশাল স্থাপন করিয়া জগৎশেঠের আয়ের পথ সঙ্কীর্ণ করিবার প্রত্যাশায় গোপনে গোপনে বাদশাহের দরবারে অর্থবৃষ্টি করিতেছিলেন,[২] তাঁহারাই যখন কার্য্যানুরোধে শেঠজীকে আকাশ হইতেও উচ্চস্থানে উঠাইতে লাগিলেন, তখন শেঠজী একেবারে বিগলিত হইয়া পড়িলেন। ভবিষ্যতের যবনিকা যে কি ভীষণ দৃশ্যপট আবরণ করিয়া রাখিয়াছে, তাহা দেখিতে না পাইয়া,

  1. Consultations at Fulta, 23 November 1756.
  2. Despatch to Court, 12 February.