পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৩০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯২
সিরাজদ্দৌলা

 ওয়াট্‌সন্ ইহাতেও বিচলিত হইলেন না! তিনি বুঝিয়াছিলেন যে, সিরাজদ্দৌলা দিল্লীর আক্রমণভয়ে অতিমাত্র ভীত হইয়া ইংরাজের নিকট সাহায্যভিক্ষা করিয়াছেন, সুতরাং এ সময়ে দায়ে পড়িয়াই—চন্দননগর লুণ্ঠনের অনুমতি দিতে হইবে। ওয়াট্‌সন্ হয়ত ভাবিয়াছিলেন যে, সিরাজদ্দৌলার আবার ধর্ম্মাধর্ম্ম কি? স্বার্থরক্ষার জন্য তাঁহাকে অবশ্যই ইংরাজের মনস্তুষ্টি করিতে হইবে। তিনি সেই জন্য নানারূপ গৌরচন্দ্রিকা করিয়া সিরাজদ্দৌলাকে যাহা লিখিয়া পাঠাইলেন তাহার মর্ম্মার্থ এইরূপ:—“চন্দননগরের ফরাসিদুর্গে অনেক সেনা রহিয়াছে, তাহাদিগকে পশ্চাতে রাখিয়া আমরা দূরদেশে যুদ্ধযাত্রা করিতে পারি না। আপনি অনুমতি করিলেই আমরা ফরাসিদিগকে নির্ম্মূল করিয়া সসৈন্যে আপনার সঙ্গে পাটনা অঞ্চলে গমন করিতে পারি।”[১]

 সিরাজদ্দৌলা বিষম বিপদে পতিত হইলেন। এদিকে বাদশাহী সিপাহী সদর্পে অগ্রসর হইতেছে, ওদিকে ইংরাজসিংহ সগর্ব্বে ফরাসিদলনের আয়োজন করিতেছেন;—সিরাজদ্দৌলা কোন্ দিক রক্ষা করিবেন? তিনি যদি পদাশ্রিত ফরাসিবণিকের সর্ব্বনাশ করিয়া ইংরাজের সাহায্য ক্রয় করিতে সম্মত হইতেন, তাহা হইলে হয় ত উভয়কুলই রক্ষা হইতে পারিত, এবং ইতিহাসলেখকেরাও বোধ হয় দুই হাত তুলিয়া সিরাদ্দৌলার জয়ধ্বনিতে দিঙ্মণ্ডল পরিপূর্ণ করিতেন! কিন্তু সিরাজদ্দৌলা তাহা পারিলেন না; পদাশ্রিত ফরাসিবণিকের সর্ব্বনাশ করিয়া ইংরাজের নিকট সেনাভিক্ষা করা সিরাজদ্দৌলার মনঃপূত হইল না। তিনি ওয়াটসনের প্রস্তাবের প্রত্যুত্তর দিয়া বাহুবলে আত্মরক্ষার জন্য সেনাসংগ্রহে নিযুক্ত হইলেন। ইহাতেই সিরাজদ্দৌলার সর্ব্বনাশের সূত্রপাত হইল।

  1. Ive's Journal.