পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৪
সিরাজদ্দৌলা।

এই সময়ে মান্দ্রাজ এবং বোম্বাই হইতে কয়েক পল্টন ফৌজ আসিবার সংবাদ প্রাপ্ত হইয়া ইংরাজদিগের সকল ইতস্ততঃ মিটিয়া গেল; তাঁহারা দরবার বসাইয়া কর্তব্যনির্ণয়ে নিযুক্ত হইলেন!

 এই মন্ত্রণাসভায় ক্লাইব প্রধান মন্ত্রীর আসন গ্রহণ করিলেন; গবর্ণর ড্রেক, মেজর কিলপ্যাট্রিক, এবং বীচার সাহেব সদস্য হইলেন। ক্লাইবের বক্তৃতা শেষ হইলে সকলেই বুঝিলেন যে, আর নবাবের অনুমতিলাভের আশা নাই, বরং তিনি সসৈন্যে ফরাসিপক্ষ অবলম্বন করাই সম্ভব। সুতরাং সহসা চন্দননগর আক্রমণ করিলে আলিনগরের সন্ধিভঙ্গ হইয়া নবাবের সঙ্গে পুনরায় শত্রুতার সূত্রপাত হইবে। মেজর কিলপ্যাট্রিক এবং বীচার বলিলেন “এরূপ ক্ষেত্রে যুদ্ধ করা অনুচিত।” ক্লাইব তাঁহাদের কথায় বাধা দিয়া বলিয়া উঠিলেন, “কিসের সন্ধি? এই ত চন্দননগর আক্রমণের উপযুক্ত অবসর।” তখন সকলেই ড্রেক সাহেবের মুখের দিকে চাহিলেন; তিনি অনেক হত ইতি গজ করিলেন, কিন্তু উপস্থিত সমস্যার কোনই মীমাংসা করিতে পারিলেন না। তাঁহার ‘মত’ কেহ গণনার মধ্যে আনিলেন না। দুই জন সন্ধির পক্ষে, একজন যুদ্ধের পক্ষে, এরূপ অবস্থায় সন্ধি করাই স্থিরীকৃত বটে। কিন্তু মেজর সাহেব সহসা ক্লাইবকে জিজ্ঞাসা করিলেন —“আচ্ছা, এখন আমাদের যত সেনাবল সংগৃহীত হইয়াছে, তাহা লইয়া নবাব এবং ফরাসি দুইদলকেই পরাস্ত করা কি সম্ভব নহে?” ক্লাইব বলিলেন,—“নিশ্চয়ই সম্ভব।” তখন কিলপ্যাট্রিক মত পরিবর্ত্তন করিয়া বলিয়া উঠিলেন, ‘তবে আমিও আর সন্ধি চাহি না।’[১] দরবার ভঙ্গ

  1. মন্ত্রণাব্যাপারের সমালোচনা করিতে গিয়া ইংরাজ ইতিহাসলেখক জেম্‌স্ মিল সদস্যদিগকে পরিহাস করিতে ত্রুটি করেন নাই।