পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৩৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩০
সিরাজদ্দৌলা।

পরাস্ত করিয়া কার্য্যসিদ্ধি করা সম্ভব, স্ক্রাফ্‌টনের উপর সেই ভার নিক্ষিপ্ত হইল। তিনি উমিচাঁদকে নির্জ্জনে বুঝাইতে বসিলেন;—“কথাবার্ত্তা ত একরূপ শেষ হইয়া গেল। এখন দুই চারিদিনের মধ্যেই লড়াই বাধিবে। তখন সকলকেই তাড়াতাড়ি অশ্বারোহণে পলায়ন করিতে হইবে। আমরা হয় একরূপ করিব; কিন্তু তুমি,—একে স্থূলদেহ, তাহাতে স্থবির,— তুমি কি অশ্বারোহণে পলায়ন করিতে পারিবে?” উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইল;— উমিচাঁদ একেবারে মাথায় হাত দিয়া বসিয়া পড়িলেন। তিনি অনেক কথা ভাবিয়া রাখিয়াছিলেন, কিন্তু পলায়নের কথা একবারও তাঁহার মস্তকে প্রবেশ করে নাই! তিনি কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ়ের ন্যায় স্ক্রাফ্‌টনের হাতে আত্মসমর্পণ করিলেন; তখন সুকৌশলে সিরাজদ্দৌলার অনুমতি লইয়া দুই জনেই কলিকাতা যাত্রা করিলেন।

 যাহারা পাপসংকল্পে লিপ্ত হয়, তাহারা কাহাকেও প্রাণ খুলিয়া বিশ্বাস করিতে চাহে না। ইংরাজেরা স্থির করিলেন যে, মীরজাফর যখন সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করিবেন, সে সময়ে ইংরাজ-প্রতিনিধি ওয়াট্‌স্‌ সাহেব উপস্থিত থাকা চাই। কিন্তু সিরাজের সন্দেহে পড়িয়া মীরজাফর পদচ্যুত হইয়াছিলেন; গুপ্তচরগণ সতর্ক দৃষ্টিতে তাঁহার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করিতেছিল;—এরূপ অবস্থায় সন্ধিপত্র স্বাক্ষরিত হওয়া দুষ্কর হইয়া উঠিল!

 অবশেষে ওয়াট্‌স সাহেব একদিন অসীম সাহসে নির্ভর করিয়া আস্তরণাবৃত শিবিকাররাহণে অবগুণ্ঠনবতী রমণীর ন্যায় সভয়ে সসঙ্কোচে মীরজাফরের অন্তঃপুরদ্বারে উপনীত হইলেন। সম্ভ্রান্ত মুসলমানগৃহের রীত্যনুসারে শিবিকা একেবারে অন্তঃপুরে নীত হইল। ওয়াট্‌স্ তাহার ভিতর হইতে বাহির হইয়া বেগম মহলে আসনগ্রহণ করিলেন।[১] তাঁহার সম্মুখে মীরজা-

  1. Orme, ii.