এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় সিরাজদ্দৌলার সর্ব্বনাশের সূত্রপাত হইল। তিনি ভাবিয়াছিলেন যে, তাঁহার পরাজয়বার্ত্তা তখন পর্য্যন্তও দূর দূরান্তরে নীত হয় নাই; সেই ভরসায় সিরাজদ্দৌলা স্বয়ং নদীতীরে অবতরণ করিলেন, নাবিকগণ ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত হইয়া নদীমুখের সন্ধান লইতে লাগিল, ইত্যবসরে যৎকিঞ্চিৎ খাদ্য সংগ্রহের জন্য সিরাজ নিকটস্থ মুসলমান মস্জেদে আতিথ্য গ্রহণ করিলেন। এই মস্জেদ দানশা নামক বিখ্যাত মুসলমান সাধুর সমাধিমন্দির; তাহা অদ্যাপি সাহপুর নামক গ্রামে ভগ্নাবস্থায় বিরাজ করিতেছে।[১] মস্জেদের লোকে ক্ষুদ্র পল্লীতে সিরাজদ্দৌলার ন্যায় অতিথির নৌকা দেখিয়া বিস্ময়াবিষ্ট হইয়াছিল, পরে নাবিকগণের নিকট সন্ধান লইয়া তাহারা সকল সমাচার অবগত হইল। মীর দাউদ এবং মীরকাশিমের সেনাদল নিকটেই অবস্থান করিতেছিল, অর্থলোভে লোকে তাহাদিগকে সিরাজদ্দৌলার সন্ধান বলিয়া দিল। সিরাজ ক্ষুধার অন্ন গলাধঃকরণ করিবারও অবসর পাইলেন না, সপরিবারে মীরকাশিমের হস্তে বন্দী হইলেন।
- ↑ মালদহনিবাসী স্নেহভাজন বন্ধু শ্রীযুক্ত রাধেশচন্দ্র শেঠ বহুক্লেশে এই মস্জেদের ফলকলিপি সংগ্রহ করিয়া মস্জেদের কয়েকখানি কারুকার্য্যখচিত পুরাতন ইষ্টক উপঢৌকন পাঠাইয়া দিয়াছেন। কেহ বলেন সিরাজদ্দৌলা এই মস্জেদের নিকটেই কারারুদ্ধ হইয়াছিলেন, আবার কেহ বলেন (Tarikh-i.rnansuri) তিনি রাজমহলের নিকট কারারুদ্ধ হন। এই মস্জেদ রাজমহলের নিকট না হউক, রাজমহল হইতে বহুদুরে নহে। রিয়াজ উস্ সালাতিনের মতে কালিন্দী তীরেই সিরাজদ্দৌলা কারারুদ্ধ হইয়াছিলেন।
Beveridge, c. s. অর্ম্মি লিখিয়া গিয়াছেন যে সিরাজ রাজমহল পর্যন্ত উপনীত হইয়া তথায় একজন ফকিরের চক্রান্তে কারারুদ্ধ হন। এই বর্ণনা সত্য বলিয়া বোধ হয় না।