পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
সিরাজদৌলা।

খাট রকমের দুর্গ ছিল; চারিদিকে মাটির দেওয়াল, তাহার মধ্যে খান- কতক খড়ের চালা, ইহাই সে দুর্গের সম্বল। সুতরাং গিরিদুর্গবিজয়ী মহারাষ্ট্র-সেনার পক্ষে কাটোয়া-দুর্গ জয় করিতে মুহূর্তমাত্র বিলম্ব হইল না।

 দেখিতে দেখিতে ভাগীরথীর পশ্চিমতীরস্থিত সম্পন্ন জনপদগুলি জনশূন্য হইয়া গেল। লুণ্ঠন-পরায়ণ মহারাষ্ট্র-সেনা গ্রাম নগর লুণ্ঠন করিয়া চালে চালে আগুন ধরাইয়া দিল, অশ্বপদ তাড়নায় শস্যক্ষেত্র পদদলিত হইয়া গেল, লোকে স্ত্রীপুত্রের হাত ধরিয়া হাহাকার করিতে করিতে ভাগীরথী পার হইয়া পলায়ন করিতে আরম্ভ করিল। আলি-বর্দ্দী স্বয়ং অসিহন্তে মহারাষ্ট্রদলনে বাহির হইলেন; কিন্তু ভাগীরথী পার হইয়াই বুঝিতে পারিলেন যে, মহারাষ্ট্রসেনা সম্মুখযুদ্ধে অগ্রসর হইবে না। দলে দলে বিভক্ত হইয়া যথেচ্ছ লুটপাট করাই তাহাদের উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য সাধন করিবার জন্য তাহারা একদলে আলিবর্দ্দীর সঙ্গে হাতাহাতি করিতেছে, অথচ সেই অবসরে আর একদল গিয়া নবাবের পটমণ্ডপ পর্য্যন্তও লুটিয়া লইতেছে! কয়েক দিন এইরূপ অদ্ভুত যুদ্ধ বুঝিয়া আলিবর্দ্দী সংবাদ পাইলেন যে, মহারাষ্ট্র-সেনা রাজ- ধানী আক্রমণ করিয়া জগৎশেঠের রাজভাণ্ডার পর্যন্তও লুটিয়া লই- আছে;—মুর্শিদাবাদ জনশূন্য হইয়াছে!


    কাটোয়ার নাম দেখিতে পাওয়া যায়। পথিকদিগের আশ্রয়ের জন্য নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁ এখানে একটি প্রহরীমন্দির নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। বর্গীর হাঙ্গামায় এই স্থান এমন শ্রীহীন হইয়া পড়িয়াছিল যে, লোকে পথ চলিবার সময়ে শ্বাপদ জন্তুর হাতে পড়িবার ভয়ে শিঙ্গা বাজাইয়া পথ চলিত। ইতিহাস-লেখকেরা বলেন, “Cutwa was formerly the military key of Moorshidabad.”