পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভাস্করের হত্যাকাণ্ড।
৩১

সাহায্যে সহজেই ভাস্করকে তাড়াইয়া দিলেন। একবার তাড়া খাইয়াই ভাস্কর পণ্ডিত পরাজিত হইলেন না;—একবৎসরও নিরুদ্বেগে অতি- বাহিত হইল না, বর্ষা শেষে আবার ভাস্করের রণভেরী বাজিয়া উঠিল।

 এবার ভাস্করসৈন্যের সহিত নবাব সৈন্যের মনকরার প্রান্তরে সম্মুখ- যুদ্ধের আয়োজন হইল। যুদ্ধ হইল না; আলিবর্দ্দী অর্থদানে তুষ্ট করিবার প্রলোভন দেখাইয়া ভাস্করকে আপন শিবিরে নিমন্ত্রণ করিয়া পাঠাইলেন। অর্থলোভে ভাস্কর পণ্ডিত নিঃশঙ্কচিত্তে অল্প কয়েকজন অনুচর লইয়া নবাব-শিবিরে পদার্পণ করিলেন। ইঙ্গিতমাজে নবাব সৈন্য পিঞ্জরাবদ্ধ বনশার্দ্দলের মত ভাস্কর পণ্ডিতকে হত্যা করিয়া ফেলিল;—ভাস্কর কটিদে হইতে শাণিত খরশাণ কোষমুক্ত করিবারও অবসর পাইলেন না। মহারাষ্ট্র-সেনা পলায়ন করিল, নবাব-সৈন্য দশ লক্ষ টাকা পুরস্কার পাইল;[১] মনকরার শিবির আলিবর্দ্দীর কলঙ্কস্তম্ভে পরিণত হইল; কিন্তু মুসলমান ইতিহাসলেখক তাহার জন্য একবারও আলিবর্দ্দীর নিন্দা করিলেন না! [২]

 ১৭৪৫ খৃষ্টাব্দে এক অভাবনীয় নুতন বিপদ উপস্থিত হইল! সেনা- পতি মুস্তাফা খাঁ একজন বিশ্বাসী বীরপুরুষ বলিয়া পরিচিত ছিলেন। সাহস ছিল, রণকৌশল ছিল, ইংরাজ তাড়াইবার জন্য উৎসাহ ছিল। আলিবর্দ্দী তাঁহার সকল পরামর্শে সম্মত না দিলেও তাঁহাকে মনে মনে শ্রদ্ধা করিতেন। সেই মুস্তাফা খাঁ সহসা আট সহস্র অনুচর লইয়া

  1. Mutakherin,
  2. “Golam Hossein, the Mahomedan historian, has no word blame for this atrocity."-H. Beveridge, C. S. কিন্তু হোসেন কুলী খাঁ হত্যাকাণ্ডে এই ইতিহাস-লেখক সিরাজদ্দৌলাকে যথেষ্ট তিরস্কার করিতে করেন নাই।