পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
সিরাজদ্দৌলা

আরম্ভ হইয়াছে, এমন সময়ে সুযোগ বুঝিয়া চতুর মহারাষ্ট্রদল নবাবসেনাদলকে আক্রমণ করিবার জন্য অগ্রসর হইতে লাগিল। সম্মুখে প্রবল আফগানদল, পার্শ্বে লুণ্ঠন লোলুপ মহারাষ্ট্র সেনা;—কিন্তু সেদিকে লক্ষ্য না করিয়া আলিবর্দ্দী ক্ষিপ্তের ন্যায় কেবল সম্মুখেই অগ্রসর হইতেছেন। সিরাজদ্দৌলা বালক, প্রবীণ রণপণ্ডিত আলিবর্দ্দীর তুলনায় শিশু অপেক্ষাও অশিক্ষিত; কিন্তু তিনি এই ভ্রম ধরিয়া ফেলিলেন। মাতামহের অনুমতি লইয়া মহারাষ্ট্রদলকে আক্রমণ করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন। আলিবর্দ্দী সে কথায় কর্ণপাত করিলেন না; কেবল সম্মুখের দিকেই অগ্রসর হইতে লাগিলেন।

 উভয় সৈন্যের তুমুল সংঘর্ষে যুদ্ধ-কোলাহলে শত্রুমিত্র মহাসমরে মিশিয়া গেল। সেই গোলোযোগে সমসের খাঁ নিজ সৈন্যের গতিরোধ করিতে পারিলেন না। কে কোথায় ছিটকাইয়া পড়িতে লাগিল; অবশেষে সমসের খাঁ একাকী শত্রুমধ্যে পতিত হইলেন। হবিববেগ নামক একজন সেনানায়ক সুযোগ পাইয়া একলম্ফে সমসেরের মস্তক ছেদন করিয়া ফেলিলেন; কবন্ধদেহ হস্তীপৃষ্ঠ হইতে ভুমিতলে লুটাইয়া পড়িল। সমসেরের ছিন্নমুণ্ড লইয়া হবিববেগ আলিবর্দ্দীর হস্তে উপহার প্রদান করিলেন। আর যুদ্ধ করিতে হইল না, আফগান সৈন্য পলায়ন করিল, মহারাষ্ট্রদল দূরে সরিয়া দাঁড়াইল। আলিবর্দ্দী রুধিরচর্চ্চিত রণক্ষেত্রে অসিহস্তে চাহিয়া দেখিলেন, যুদ্ধজয় সমাধা হইয়াছে। ঘটনাচক্রে সমসের খাঁ নিহত হওয়াতেই যুদ্ধজয় হইল। কিন্তু যদি ঘটনাচক্র অন্যভাবে পরিবর্ত্তিত হইত, তবে সিরাজদ্দৌলার পরামর্শ উপেক্ষা করিবার জন্য আলিবর্দ্দী অনুশোচনা করিবার অবসর পাইতেন কি না, কে বলিতে পারে?