পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সিরাজের পাটনা আক্রমণ।
৪৭

 সিরাজ বুঝিলেন যে, এইবার সুসময় উপস্থিত। পূর্ণিয়ার বিস্তৃত জনপদে সাইয়েদ আহ্‌মদ নবাবী করিতেছেন, ঢাকার বিপুল রাজভাণ্ডার হাতে পাইয়া নওয়াজেস্ এবং রাজবল্লভ মুক্তহস্তে অর্থব্যয় করিতেছেন, যাঁহারা বিদ্রোহী বিশ্বাসঘাতক তাঁহারাও পরম সুখে পদগৌরব উপভোগ করিতেছেন; কেবল সিরাজদ্দৌলাই বিহারের নবাব হইয়াও মাসিক বৃত্তির নির্দিষ্ট তঙ্কা লইয়া রজধানীতে বসিয়া আলস্যে জীবন যাপন করিবেন কেন? তিনি আর এমন করিয়া আপন স্বার্থ পদদলিত করিতে সম্মত হইলেন না। পিতা নাই, তিনি বিহারে সিংহাসনে বসিয়া যে প্রভূত ধনরত্ন সঞ্চয় করিয়াছিলেন, তাহাও আফগানগণ লুটিয়া লইয়াছে, আজ কাল বিহারে যাহা কিছু আয় হইতেছে, তাহাও কেবল জানকীরামেরই সৌভাগ্য বর্দ্ধন করিতেছে। সিরাজদ্দৌলার চক্ষে ইহা বড়ই অবিচার বলিয়া বোধ হইল। তিনি বিশ্বাসী অনুচর লইয়া দেশভ্রমণ উপলক্ষে মুর্শিদাবাদ হইতে বাহির হইয়া পড়িলেন।[১] মাতামহ মেদিনীপুরে, সুতরাং কেহ আর সাহস করিয়া সিরাজদ্দৌলার গতিরোধ করিল না।

 পাটনায় আসিয়াই সিরাজদ্দৌলা ছদ্মবেশ খুলিয়া ফেলিলেন, রাজা জানকীরামকে স্পষ্টই বলিয়া পাঠাইলেন যে, তিনি রাজপ্রতিনিধি মাত্র,


    চন্দ্ রোজকী রোক্‌শৎ মুর্শিদাবাদকে সয়ের ও তফ্‌রীকে বাহানাসে লেকর মুর্শিদাবাদ পঁহুচা”—মুতক্ষরীণ।

  1. মুতক্ষরীণে লিখিত আছে যে, “সিরাজদ্দৌলা তাঁহার প্রিয়সহচরী লুৎফউন্নিশা বেগমকে সঙ্গে লইয়া গো-শকটে আরোহণ করিয়া প্রস্থান করেন। হোসেন কুলী খাঁ কিয়দ্দূর পশ্চাদ্ধাবন করিয়াছিলেন, ধরিতে না পারিয়া প্রত্যাগমন করিতে বাধ্য হন। সিরাজদ্দৌলার বলীবর্দ্দ দিন বিশ ক্রোশ করিয়া ছুটিত!”