পাতা:সিরাজদ্দৌলা - অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০
সিরাজদ্দৌলা।

তারার অনুপম রূপলাবণ্যের কথা অধিক দিন লুক্কায়িত রহিল না। একদিন প্রাসাদশিখরে পাদচারণ করিতে করিতে আজানুলম্বিত কেশপাশ উন্মুক্ত করিয়া রাজকুমারী তারা স্বচ্ছন্দভাবে বায়ুসেবন করিতেছিলেন। সেই ক্রোড়বাহিনী ভাগীরথী-জলে সিরাজদ্দৌলার বিলাসতরণী মন্থরগতিতে ভাসিয়া যাইতেছিল। কুক্ষণে সেই অতুলনীয় রূপের ফলিতজ্যোতি চকিতের ন্যায় সিরাজের পাপচক্ষে পতিত হইল! সিরাজ নবীন যুবক, চিত্ত দুর্দ্দমনীয়বেগে নিয়ত অসংযত, পারিষদবর্গের অপরাজিত উত্তেজনায় সর্ব্বদা মদ-দর্পিত; সুতরাং সিরাজ সেই রূপরাশি হস্তগত করিবার জন্য উন্মত্ত হৃদয়ে উপায় উদ্ভাবনে নিযুক্ত হইলেন। মুসলমান ইতিহাস-লেখক এই কুকীর্ত্তির কোন উল্লেখ করেন নাই, কিন্তু হিন্দু দিগের মধ্যে বংশানুক্রমে এই জনাপবাদ প্রচলিত হইয়া আসিতেছে।[১] যদি রাজ্যবিনিময়েও সিরাজের মতিভ্রম দূর করা সম্ভব হইত, রাণী ভবানী হয় ত তাহাতেও ইতস্ততঃ করিতেন না। কিন্তু সিরাজের নামে সকলেই শিহরিয়া উঠিলেন অবশেষে বিচক্ষণ পরামর্শদাতৃগণ একদিন মহাসমারোহে গঙ্গাতীরে এক চিতাকুণ্ড প্রজ্বলিত করিলেন, ধূমপুঞ্জে ভাগীরথীতীর আচ্ছন্ন হইয়া পড়িল, সঙ্গে সঙ্গে চারি দিকে রাষ্ট্র হইল যে, রাজকুমারী তারা সহসা পরলোক গমন করিয়াছেন। ইহাতে তারা ঠাকুরাণীর ধর্ম্মরক্ষা হইল বটে, কিন্তু সিরাজের পাপলিপ্সা ভস্ম

  1. রাণী ভবানীর বংশধর বড়নগর রাজবাটীর স্বর্গীয় রাজ। উমেশচন্দ্রের নিকট এই কাহিনী সংগ্রহ করিয়া একজন সুলেখক নব্যভারত পত্রিকায় তাহার বিস্তৃত বিবরণ প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন। কিন্তু রাজসাহী প্রদেশে এই জনশ্রুতি বহুবিধ আকারণ করিয়াছে।