পাতা:সিরাজদ্দৌলা - গিরিশচন্দ্র ঘোষ.pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় অঙ্ক
১৩৭
মীরজাঃ। জনাব, ক্ষুব্ধ হয়েছিলেম সত্য, কিন্তু জনাবের বাক্যে সে ভাব সম্পূর্ণ দূর হয়েছে। কোন চিন্তা নাই, জনাব নিরুদ্বেগে সিংহাসন উপভোগ করুন। আপনার শত্রু দমনের ভার আমি গ্রহণ কর্‌লেম, কার সাধ্য আপনার অনিষ্ট সাধন করে। আপনি যেরূপ আজ্ঞা কর্‌বেন, আমি সেইরূপ কর্‌তে প্রস্তুত। আজ্ঞা দেন, আমি সসৈন্যে ইংরাজ বিরুদ্ধে যাত্রা করি। দৃষ্টিমাত্রে ইংরাজবাহিনী চূর্ণ কর্‌বো, এ প্রদেশে ইংরাজের নাম বিলুপ্ত কর্‌বো, ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী অতীতে পরিণত হবে। নিশ্চিন্ত হৃদয়ে রাজপুরে গমন করুন। নবাব-মহিষী অকারণে ক্লেশ স্বীকার করেছেন। যদিচ আমার গরীবখানা আপনার পদার্পণে পবিত্র, তথাপি আপনি ক্লেশ ক’রেছেন, এতে আমি দুঃখিত। সংবাদ দিলেই গোলাম হাজির হতো।
সিরাজ। খাঁ বাহাদুর, আপনার কথায়, আমার ভগ্ন হৃদয়ে সাহস সঞ্চার হচ্ছে, দেখ্‌বেন আশা দিয়ে নিরাশ কর্‌বেন না। আমি আপনার মীরণের তুল্য, আমার বধ সাধন কর্‌বেন না। আদরে লালিত, তা আপনার অগোচর নাই। কিন্তু আমার আহার নাই, নিদ্রা নাই,—শয়নে-স্বপনে ক্লাইবের ভীষণ মূর্ত্তি আমার সম্মুখে বিরাজিত! বিদেশী বণিকের দ্বারা আপনার পূজ্য প্রভুর পালিত সন্তানের অপমান না হয়, বিদেশী রণভেরী আর না বাঙ্গলায় শব্দিত হয়, মোগল-প্রতাপ আর না ক্ষুণ্ন হয়! আপনি রাজ্যের ভরসা, আপনি সাহস দিন, আমি বড়ই কাতর হয়েছি।
বেগম। মীরজাফর, একবার মৃত নবাব, তোমার হস্তে আমার সিরাজকে অর্পণ করেছিলেন, এবার আমি তোমার হাতে আমার বালক সিরাজকে অর্পণ করি। অলিবর্দ্দীর সন্তানকে রক্ষা করো;—এ বৃদ্ধ বয়সে আলিবর্দ্দীর বেগমকে সন্তাপিত ক’রো না।