পাতা:সিরাজদ্দৌলা - গিরিশচন্দ্র ঘোষ.pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্থ অঙ্ক
১৪৩
তাদের গদী দিতে এসো নাই, আপনার প্রভুত্বের জন্যে এসেছ। সকলেই বুদ্ধিমান, কিন্তু স্বার্থ এরূপ বলবান্, যে তোমাদের স্বরূপ মনোভাব কেউ বুঝতে সক্ষম হয় নি।
ক্লাইব। তবে তুমি কিরূপে বুঝিলে?
জহরা। আমার দিব্য চক্ষু প্রস্ফুটিত; পতিপ্রেম আমার স্বার্থ, আত্মসুখ স্বার্থ নয়! আমি পতি-পুত্রহীনা, আমার দেশের মায়া কি,—জাতীয়তা কি? আমার একমাত্র হোসেন কুলীর স্মৃতি! সেই স্মৃতি আমায় সহস্র দানবীয় বল দিয়েছে। যে দিন নবাব-শোণিতে হোসেন কুলির প্রেতাত্মার তৃপ্তি করবো, সেই দিন থেকে—আমি যে রমণী সেই রমণী,—পতিশোকাতুরা রমণী, পতির কবরের পার্শ্বে অনন্ত শয্যায় শয়ন কর্‌বো!
ক্লাইব। তোমার কি মনে হয়—হামরা যুদ্ধ জিতিব? মীরমদন, মোহনলাল, সিনফ্রেঁ,—উহাদিগের সৈন্য একত্রিত করিলে, হামাদিগের যুদ্ধ সঙ্গিণ।
জহরা। সাহেব, যদি সকল সৈন্য একত্র হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তথাপি জেনো তোমাদের জয়। (আকাশে বজ্রধ্বনি) ঐ শোনো, গগনমার্গে বজ্রনাদে বিধাতা বল্‌চে তোমাদের জয়! সাহেব, আমার দিব্যচক্ষু প্রস্ফুটিত, বিধি-লিপি আমার সম্পূর্ণ গোচর। ঈশ্বর দীননাথ, তিনি দীনের দুঃখ সহ্য করেন না। ভারতবর্ষে, দীন প্রজা দিবারাত্র হাহাকার করছে, ভারতবর্ষ শান্তিহীন। হিন্দুর দৌরাত্ম্যে যখন প্রজা পীড়িত হয়, ভগবান ভারতবর্ষ আফগানদের প্রদান করলেন; আফগানদের দৌরাত্ম্যে, প্রজা পীড়িত হওয়ায়, মোগলেরা শান্তিস্থাপন করলে। এখন মোগলেরা অত্যাচারী, মারহাট্টা অত্যাচারী,—দিন দিন যুদ্ধ বিগ্রহ, প্রজার শান্তি নাই,