পাতা:সিরাজদ্দৌলা - গিরিশচন্দ্র ঘোষ.pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্থ অঙ্ক
১৫৭
আমায় উষ্ট্র-পৃষ্ঠে নগর প্রবেশ কর্‌তে দেখে, প্রজারা ভয়ে পলায়ন কর্‌লে। রাজ-ভাণ্ডার মুক্ত ক’রে দিয়ে, সৈন্য সঞ্চয় করতে পার্‌লেম না। আমার পক্ষে যাকে আহ্বান করি, যাকে বশীভূত কর্‌বার জন্য অর্থ প্রদান করি, সেই বিদ্রূপ করে;—আমার পতনে সকলে উল্লসিত। এ রাজপুরী আর আমার নয়, এ আমার কারাগার! জয়োন্মত্ত শত্রু-সৈন্য মুর্শিদাবাদ অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে, আর হেথায় আমার স্থান নাই। রাজপুরে ঘসেটী বেগম শত্রু, নগরে প্রজা শত্রু, অমাত্য-বান্ধব শত্রুর সহায়! আমি তোমার নিকট বিদায় হ’তে এসেছি, এই নিশীথেই নগর পরিত্যাগ কর্‌বো। গুপ্ত পথে পলায়ন কর্‌তে হবে, নচেৎ যে সন্ধান পাবে, সেই শত্রুকে সংবাদ দেবে!
লুৎফ। কোথায় যাবে, আমায় কাকে দিয়ে যাবে? সকলেই যদি বিদ্রোহী হ’য়ে থাকে, আমি তোমার প্রজা, আমার হৃদয় রাজ্যে তুমি নবাব। চলো যাই—দূর বনে যাই, যথায় নর সমাগম নাই, তথায় অবস্থান করি। ব্যাঘ্র, ভল্লুকও রাজ-অমাত্য অপেক্ষা বিদ্বেষহীন। চলো, বনবাসে কুটীরে রাজ্য স্থাপন করি, আমি তোমার প্রজা, আমি তোমার দাসদাসী, আমার সেবায় তুমি নিপুণ ভৃত্যের সেবা বিস্মৃত হবে। আমি প্রাতে আমার হৃদয়েশ্বরের বন্দনা-গান কর্‌বো, রাজভোগ প্রস্তুত কর্‌বো, ফুলশয্যা রচনা কর্‌বো। তুমি রাজ্যহীন, আমি প্রাণেশ্বর হীন নই! চলো নির্জ্জনে তোমায় দেখ্‌বো, দিবারাত্র তোমার নিকট থাক্‌বো, আমার হৃদয়ের প্রীতি উপহার দানে তোমার কর প্রদান কর্‌বো, কপট প্রজার শঠ উপাসনার পরিবর্তে, নির্ম্মল চিত্তে তোমার উপাসনা কর্‌বো;—তুমি কপট রাজ্য পরিত্যাগ ক’রে নির্ম্মল রাজ্যের রাজা হবে। দাসীকে পায়ে ঠেলো না, সঙ্গে নাও।
সিরাজ। তুমি কোথায় যাবে? বন্য পশুর ন্যায়, গোপনে কণ্টকাকীর্ণ