পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরদিবস প্রত্যুষে হাকিম আহমদুল্লাহ্ খান যখন ঈসা খাঁর শয্যাপার্থে বসিয়া তাহাকে অন্যের মাংসচ্ছেদে মত দিবার জন্য বুঝাইতেছিলেন, স্বৰ্ণ সেই সময় হাকিম সাহেবকে ইমিতে দৃঢ়তার সহিত বলিল, “আপনি বীরবার খাঁ সাহেবের ক্ষতস্থান কেটে পরিষ্কার করুন, আমি আপনাকে মাংস দিচ্ছি।” ‘জোবাদাতল হে কামা' স্বর্ণময়ীর দৃঢ়তা ও ব্যাকুলতা দেখিয়া ইঙ্গিতে অন্যান্য সহকারী:দিগকে সওঁৰ অস্ত্ৰ-চিকিৎসার সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করিতে বলিলেন। আয়োজন সম্পন্ন হইবাব পরে সকলে বিস্ময় বিস্তফারিত নেত্ৰে স্তম্ভিতভাবে দেখিলেন যে, একখানি শাণিত দুরিকা দক্ষিণ হন্তে ধারণপূর্বক স্বর্ণময়ী অবিকম্পিত হন্তে শান্তভাবে অথচ ক্ষিপ্ৰতার সহিত তাহার বাম বাহুর উপরিতাগের অংশে গভীরভাবে বসাইয়া দিয়া মাংস কাটিতে লাগিল। ‘জোৰ দাতল হােকামা’ আহমদুল্লাহ্ খান মুহুর্ত মধ্যে ঈসা খর ক্ষত কাটিয়া পরিষ্কার করিলেন। অন্য একজন হাকিম “জোৰ দাতল হােকামার ইঙ্গিতে চকিতে স্বর্ণময়ীর বাহু হইতে মাংস লইয়া ঈসা খাঁর ক্ষতস্থানে বসাইয়া দিলেন। ইত্যবসরে আর একজন অতি সত্বর একটি হরিণের জানুদেশের উপরিভাগের মাংসচ্ছেদ-পূর্বক স্বর্ণের বাহুতে বসাইয়া এক প্রকার সূক্ষ্ম চুর্ণের প্রলেপ দিয়া তাহার উপরে বরফ চাপিয়া ধরিলেন! এত ক্ষিপ্ৰতার সহিত এবং নীরবে এই গুরুতর অন্ত্র-চিকিৎসার কার্যসম্পন্ন হইল যে, ঈসা খাঁ স্বর্ণময়ীকে বাধা দিবার অবসর পর্যন্ত পাইলেন না। একবার তিনি “ওকি”! মাত্র বলিয়া উঠিয়াছিলেন। কিন্তু সে শব্দ উচ্চারণের পূর্বেই স্বর্ণ তাহার বাহু হইতে মাংস বিচ্ছিন্ন করিয়া ফেলিয়াছিল। ছয় অঙ্গুলি দীর্ঘ, তিন অঙ্গুলি প্রশস্ত এবং এক অঙ্গুলি পরিমিত গভীর ক্ষতের জন্য স্বৰ্ণময়ীর মুখে কেহ। যন্ত্রণার বিন্দুমাত্র চিহ্নও দেখিতে পাইল না। সকলেই স্বর্ণের ভূয়োভূয়ঃ প্ৰশংসা করিতে লাগিল। আয়েশা খানম স্বৰ্ণকে জড়াইয়া ধরিয়া আনন্দাশ্র বর্ষণ করিতে লাগিলেন। অনন্ত আশীৰ্বাদ ও গভীর স্নেহ জানাইয়া স্বর্ণের মুখ চুম্বন করিলেন। সোলতান নিজাম শাহু স্বর্ণের এই অতুলনীয় সৎসাহস এবং স্বাৰ্থত্যাগ দর্শনে যার-পর-নাই গ্ৰীত এবং মুগ্ধ হইলেন। প্রেমের স্বগীয় দৃশ্য দর্শনে সমগ্ৰ বিজয়নগরবাসী নরনারী,-কি হিন্দু, কি মুসলমান সকলেই ধন্য ধন্য করিতে লাগিল! স্বর্ণময়ীর পুণ্য-কথা যত্রতত্র আলোচিত হইতে লাগিল। রাজ-কবিগণ স্বৰ্ণময়ীর এই পুণ্য প্ৰেমাসক্তি দ্বাৰ্থত্যাগের কবিতা রচনা করিয়া শাহী-দরবারে এবং সভা-সমিতি ও সন্মিলনীতে পাঠ করিতে লাগিলেন । স্বৰ্ণকে দেখিবার জন্য বেগম ও শাহজাদী হইতে আরম্ভ করিয়া স্বর্ণের গৃহে নানা শ্রেণীর অসংখ্য রমণীষ্ম সমাগম হইতে লাগিল। সোলতান ও বেগমগণ স্বৰ্ণময়ীকে ধর্মকন্যা বলিয়া সমাদর ও সত্বৰ্ধনা করিতে লাগিলেন । স্বর্ণের সুচিকিৎসা এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও আরামের জন্য সর্বপ্রকারের শাহীবস্ফোৰন্ত করা হইল। ঈশ্বরোিচ্ছায় অল্পদিনের মধ্যেই ঈসা খা এবং স্বৰ্ণময়ী আরোগ্যলাত Sob